লন্ডনের টাওয়ার "হার ম্যাজেসটিস রয়্যাল প্যালেস অ্যান্ড ফোর্টরেস"(রাজকীয় মহিমার প্রাসাদ ও দুর্গ) নামেও পরিচিত, একটি রাজকীয় প্রাসাদ যা বিভিন্ন ভবনের একটি চত্বর নিয়ে গঠিত এবং এই প্রাসাদটি মূলত লন্ডন শহরটির রক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত হয়েছিল। নরম্যান সামরিক স্থাপত্য বিজেতা উইলিয়াম দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং যা ইতিহাস জুড়ে প্রসারিত হয়েছে। হোয়াইট টাওয়ার সহ এই চত্বর বিভিন্ন ভবন নিয়ে গঠিত এবং প্রতিরক্ষামূলক দেওয়াল ও একটি পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত।
লন্ডনের টাওয়ার ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ইংল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকচিহ্ন(ল্যান্ডমার্ক) যা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। সম্ভবত এই বৈশিষ্ট্য গুলির মধ্যে সবথেকে বেশী বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য হল লন্ডন টাওয়ারের জুয়েল হাউসের মধ্যে ক্রাউন জুয়েল।ক্রাউন জুয়েলে বহু রাজকীয় প্রতীক রয়েছে যেমন - মুকুট, রাজদণ্ড, তলোয়ার এবং চক্র। 1303 সালে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে চুরি হওয়ার (এবং পরে পুনরুদ্ধার হয়) পর এই ঐতিহাসিক জিনিসগুলি লন্ডন টাওয়ারে সুরক্ষিত ভাবে রাখা হয়। প্রারম্ভে এই মহীয়ান প্রাসাদটি একটি রাজকীয় বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত।এই প্রাসাদ রাণীর রক্ষিবাহিনী দ্বারা পাহারা দেওয়া হয়, যারা তাদের লাল কোট এবং লম্বা কালো টুপির স্বাতন্ত্র্যসূচক আনুষ্ঠানিক পোশাকের জন্য বিখ্যাত।
শুরুর দিকে লন্ডনের টাওয়ার কে "ব্লাডি টাওয়ার" (রক্তাক্ত টাওয়ার) হিসাবে আখ্যা দেওয়া হত কারণ আগে এটি একটি কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাক্তন আসামী ছিলেন স্যার ওয়াল্টার র্যা লে।ষষ্ঠদশ ও সপ্তদশ শতকের সময়কালে অনেক ব্যাক্তিত্ব মর্য্যাদাহানিতে পতিত হন, যার মধ্যে রয়েছে প্রথম এলিজাবেথ-যিনি রাজপদে সম্মান্নিত হওয়ার পূর্বে এই টাওয়ারের মধ্যে কারারুদ্ধ ছিলেন।
লন্ডন টাওয়ারের বহির্বিন্যাস তিনটি ওয়ার্ড যথা- হোয়াইট টাওয়ার, অন্তরতম ওয়ার্ড ও বহিঃস্থ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। হোয়াইট টাওয়ার একটি শক্তিশালী কাঠামো ছিল যা আগে রাজা বা শাসকদের বাসস্থানের জন্য ব্যবহৃত হত।হোয়াইট টাওয়ারের অভ্যন্তরে সেন্ট জনস চ্যাপেল অবস্থিত।হোয়াইট টাওয়ারের দক্ষিণ দিকের অন্তরতম ওয়ার্ড হল একটি কাঠের ভবন। এই টাওয়ারকে সম্প্রসারণ করার জন্য বহিঃস্থ ওয়ার্ডটি প্রথম এডওয়ার্ডের সময় তৈরি করা হয়। এটি একটি সংকীর্ণ ঘেরা যা দুর্গটিকে পরিবেষ্টন করার জন্য নির্মিত হয়েছিল।
লন্ডনের টাওয়ারের বড় কাক বা র্যা ভেনগুলি সম্পর্কে একটি আকর্ষণীয় পৌরাণিক ঘটনা রয়েছে। এই পৌরাণিক ঘটনা অনুযায়ী বলা হয় যে "লন্ডনের টাওয়ারের কাক গুলি হারিয়ে গেলে বা দূরে উড়ে গেলে, এই মুকুটটি পড়ে যাবে এবং ব্রিটেনও পতিত হবে"। প্রকৃতপক্ষে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের সময় থেকে এই কাকগুলি এই টাওয়ারে রয়েছে।বর্তমানে এখানে 7 টি কাক রয়েছে যেগুলি প্রাতিষ্ঠানিক খেতাবধারী র্যা ভেন মাস্টার দ্বারা প্রতিপালিত হয়।ক্রাউন জুয়েলের পরেই এই কাকগুলি হল এই টাওয়ারের সর্ববৃহৎ পর্যটন আকর্ষণ।
লন্ডনের টাওয়ারটি তৈরি করা হয়েছে এই শহরকে রক্ষা করার জন্য। এই চত্বরটি মধ্য লন্ডনের টেমস নদীর উত্তর তীর বরাবর টাওয়ার হ্যামলেটের পৌরসভায় অবস্থিত।
ঠিকানা: লন্ডন ইসি3এন 4এবি, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য
লন্ডনের আবহাওয়া প্রায়শই মেঘাচ্ছন্ন থাকে কিন্তু খুব একটা অসহনীয় হয়না।ডিসেম্বর ও জানুয়ারির সময় পর্যটকরা কখনো কখনো তুষারপাতের সম্মুখীন হয় যার ফলে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন এবং ভ্রমণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।দীর্ঘ দিবালোক এবং উষ্ণ তাপমাত্রা সহ গ্রীষ্মকাল হল লন্ডন টাওয়ার পরিদর্শনের সেরা সময়।
গ্রীষ্মকালে মঙ্গলবার থেকে শনিবার লন্ডনের টাওয়ার সকাল 9:00 টা থেকে বিকাল 5:30টা পর্যন্ত খোলা থাকে, অন্যদিকে রবিবার ও সোমবার সকাল 10:00টা থেকে বিকাল 5:30টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং 5:00টা পর্যন্ত সর্বশেষ প্রবেশ অনুমতি থাকে।
শীতকালে খোলার সময় একই থাকে কিন্তু বন্ধের সময় হল 4:30 টা এবং 4:00 টা পর্যন্ত সর্বশেষ প্রবেশ অনুমতি থাকে।
এই টাওয়ার 24 শে ডিসেম্বর থেকে 26শে ডিসেম্বর এবং 1 লা জানুয়ারী বন্ধ থাকে।
আপনি টিকিট গিয়ে কিনতে পারেন অথবা অনলাইন বা 0844 482 7799 নম্বরে ফোন করে টিকিট কিনতে পারেন। টিকিটের মূল্য প্রতি বছর পরিবর্তিত বর্তমান ফি স্ল্যাব (w.e.f. 1লা মার্চ ’13 থেকে 28শে ফেব্রুয়ারী ’14) হল নিম্নরূপ -
নিকটবর্তী আকর্ষণ - লন্ডন আই, বাকিংহাম প্যালেস, পিকাডিলি সার্কাস, বিগ বেন, অল হ্যালোজ বাই দ্য টাওয়ার, লন্ডন আন্ডাররাইটিং সেন্টার, সিটি হল, লয়েড’স লন্ডন এবং সেন্ট ম্যাগনাস মার্টার।
* সর্বশেষ সংযোজন : December 09, 2015