কুলু ও মানালি হল হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত দুটি শহর এবং একে অপরের থেকে প্রায় 40 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এগুলিকে পর্যটন আবর্তনের একটি একক অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাদেরকে একসঙ্গে কুলু-মানালি বলা হয়।
কুলু ও মানালি-তে আকর্ষণ
কুলুর আকর্ষণের অধিকাংশই মন্দির কেন্দ্রিক হওয়ায়, কুলু তীর্থযাত্রীদের এবং ভক্তদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যস্থল। এই অঞ্চলের বিশিষ্ট কিছু মন্দিরের মধ্যে রয়েছে বিজলি মহাদেব মন্দির, বৈষ্ণোদেবী মন্দির এবং রঘুনাথ মন্দির। মানালি পর্যটকদের আকর্ষণের আরোও এক বৈচিত্র্যময় পরিসীমার প্রস্তাব দেয়। তবে, হাড়িম্বা মন্দির ও মা শর্বরী মন্দিরের ন্যায় বিশিষ্ট কিছু মন্দির তার ন্যায্য ভাগ দখল করে আছে। এছাড়াও এই এলাকায় বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মঠ আছে; যেমন – হিমালয়ান নাইংমাপা বৌদ্ধ মন্দির এবং আরোও ঐতিহ্যপূর্ণ পানডেন ঙ্গেরি গোম্পা।
এছাড়াও এই এলাকায় বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত ও উষ্ণ প্রসবণও রয়েছে। জলপ্রপাত এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয়, কিছু জলপ্রপাতের মধ্যে রয়েছে যোগিনী জলপ্রপাত, রাহালা জলপ্রপাত, রোজি জলপ্রপাত। কালাথ উষ্ণ প্রসবণ এবং বশিষ্ঠ উষ্ণ প্রসবণ-এ প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক পরিদর্শন করতে আসে।
কুলু মানালিতে আগত অনেক মানুষ রোটাং গিরিপথ ভ্রমণের একটি সফরকে বেছে নেন। এখানকার মহিমাম্বিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দৃশ্যের কারণেও এটি বেশ জনপ্রিয়।
কুলু ও মানালিতে করণীয়তা
কুলু জেলার, ভৃগু লেক 4,300 মিটার (14,100 ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। আলোকচিত্র-শিল্পীদের কাছে এটি একটি বিস্ময়-স্বরূপ। একদিকে যেমন গ্রেট হিমালয়ান জাতীয় উদ্যান, 180-টিরও বেশি প্রজাতির জীবজন্তু এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল, অন্যদিকে মানালি অভয়ারণ্য হল এমন একটি স্থান, যেখানে কস্তুরী মৃগ, চিতাবাঘ ও স্নো লেপার্ড বা তুষার চিতাকে দেখা যায়। ঘন দেবদারু, আখরোট ও ম্যাপল বৃক্ষের অরণ্যের মধ্যে দিয়ে পদচারণার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
এখানকার অন্যতম একটি স্থান যা শীতকালে সজীব হয়ে ওঠে, তা হল কুলু উপত্যকার উপরে উচ্চাসিত সোলাং উপত্যকা। এটি হল একটি জনপ্রিয় স্কি রিসর্ট। গ্রীষ্মকালে, এই স্থানটি প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং ও জোর্বিং-য়ের জন্য এক আদর্শ গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়। নগর দুর্গে অবস্থিত এক সুন্দর আর্ট গ্যালারী যে কোনো শিল্প-প্রেমীদের জন্য অতি আবশ্যিক পরিদর্শনযোগ্য স্থান। এখানে বিখ্যাত রাশিয়ান শিল্পী, নিকোলাস রোইরীক-এর অঙ্কন এবং ভাস্কর্য রয়েছে।
কুলু ও মানালি-তে খাবারের সংস্থান
একদিকে যেমন জনসন্ ক্যাফে শ্রেষ্ঠ মানের ইউরোপীয় খাবার পরিবেশন করে, অন্যদিকে হাড়িম্বা মন্দিরের কাছে পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ইল ফার্নো হল একটি খাঁটি ইতালীয় রেস্তোরাঁ, যেটি কাঠের তাপে সেঁকা পিৎজা থেকে লাসাগ্না এবং কালজোন থেকে পাস্তা, সমস্ত প্রকার শ্রেষ্ঠ মানের ইতালীয় খাবার পরিবেশন করে।
কুলু ও মানালিতে বাসস্থানোপযোগী ব্যবস্থা
পর্যটকদের অধিকাংশই, তাদের সাবেকিয়ানার বেশি বিকল্প প্রদানের জন্য কুলুর চেয়ে মানালিতেই থাকতে বেশি পছন্দ করে। সাশ্রয়ী ভ্রমণার্থীরা থাকার জন্য হোটেল কাঞ্চানিকুট বা হোটেল ড্রিলবু মানালি বেছে নিতে পারেন। যারা যৎসামান্য উচ্চ ব্যয়ে সামর্থ্য তারা থাকার জন্য ডে হোটেল ইন্ এবং সিলমোগ গার্ডেন হোটেল বেছে নিতে পারেন। যারা শ্রেষ্ঠত্বে ইচ্ছুক, হিমালয়ান রিসর্ট আ্যান্ড স্পা বা ম্যাপল দ্য রিভার ক্রিশেন্ট রিসর্ট তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে।
বিমান মাধ্যমে
ভূন্টার বিমানবন্দর, যা কুলু মানালি বিমানবন্দর নামেও সুরিচিত, যা কুলু থেকে 10 কিলোমিটার দূরে এবং মানালি থেকে 50 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানবন্দর থেকে গাড়ির মাধ্যমে কুলুতে পৌঁছাতে প্রায় 20 মিনিট এবং মানালিতে পৌঁছাতে প্রায় 1 ঘন্টা সময় লাগে। বিমানবন্দরে প্রচুর বিমান উপলব্ধ রয়েছে যেগুলি পর্যটকদের কাছাকাছি প্রধান প্রধান শহরগুলিতে নিয়ে যাওয়া-আসা করে।
রেল মাধ্যমে
অবস্থানগত কারণে, রেল মাধ্যমে অতি সহজে কুলু মানালিতে পৌঁছানো সম্ভব নয়। নিকটবর্তী প্রশস্ত-গেজ রেলওয়ে স্টেশন চন্ডীগড়ে অবস্থিত, যা মানালি থেকে প্রায় 300 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চন্ডীগড় থেকে মানালির মধ্যে গাড়ির মাধ্যমে পৌঁছাতে প্রায় 7 ঘন্টা সময় লাগে এবং কুলুতে পৌঁছাতে এর চেয়ে একটু কম সময় লাগে। এর সান্নিধ্যতম যোগিন্দর নগর রেলওয়ে স্টেশন হল কুলু থেকে প্রায় 104 কিলোমিটার ও মানালি থেকে প্রায় 143 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে, এটি একটি সংকীর্ণ গেজ ট্র্যাক এবং যাত্রীদের খুব কমই পছন্দের।
সড়ক মাধ্যমে
এখানে বেশ কিছু সাধারণ ও পাশাপাশি বিলাসবহুল শোভনীয় বাসও রয়েছে যেগুলি দর্শকরা আন্তঃ-রাজ্য বাস টার্মিনাল বা আই.এস.বি.টি. থেকে পেতে পারেন, যা এই অঞ্চলের প্রধান শহরগুলির মধ্যে অবস্থিত। শহরের কাছাকাছি যে কোনও জায়গা থেকে পর্যটকরা বেসরকারী ট্যাক্সিও নিতে পারেন।
কুলু মানালির আবহাওয়া স্থিতিশীল নয়। তবে, সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময় এই স্থান পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে বিবেচিত হয়।
নতুন সংযোজন
19/05/2015 : ন্যাশনাল গ্রীন ট্র্যাইব্যূনাল (এন.জি.টি.) দ্বারা আদেশিত, রোটাং গিরিপথ ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন কেবলমাত্র 1000-টি. যান চলাচল করার অনুমতি দেওয়ার প্রতিবাদে মানালির সমস্ত ট্যাক্সি চালকেরা এর বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করেন। হিমাচল ট্যাক্সি চালকদের সভাপতি, পূরান চাঁদ বলেন যে, সমস্ত ট্যাক্সিগুকে রোটাং গিরিপথ ভ্রমণের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। তিনি দাবি করেন যে, যদি তারা রোটাং ভ্রমণের অনুমতি না দেন,তবে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হবে না। সমস্ত মাঝরি-মাপের ও বৃহৎ-মাপের ট্যাক্সি ও পাশাপাশি টেম্পো-ট্রাভেলারস্ও এই ধর্মঘটে যোগদান করে।
* সর্বশেষ সংযোজন : July 20, 2015