কুতুব মিনার – দিল্লী, ভারত

কুতুব মিনার ভারতের সর্বোচ্চ প্রস্তর-নির্মিত স্তম্ভ

1198 খ্রীষ্টাব্দে, কুতুব-উদ্দিন-আইবক, বর্তমান কুতুব মিনারের উত্তর-পূর্বে কূব্বত-ঊল-ইসলাম মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। 1202 খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ, কুতুব-উদ্দিন-আইবক কুতুব মিনার নির্মাণ করেন। এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের কারণ জানা যায় নি। কিছু ঐতিহসিক মতপ্রকাশ করেন যে, এটি একটি বিজয় স্তম্ভ হিসাবে নির্মিত হয়, এদিকে অনেকে আবার বলেন যে, এটি শুধুমাত্র মসজিদ সংলগ্ন একটি মিনার। কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন যে, মুয়াজ্জিন দ্বারা নিষ্ঠাবানদের প্রার্থনার আহ্বানের জন্য এই স্তম্ভটিকে ব্যবহার করা হত।

মিনারের শুধু প্রথম তলাটি কুতুব-উদ্দিন দ্বারা সমাপ্ত হয়েছিল, বাকি তলাগুলি তার উত্তরাধিকারী দ্বারা উত্থাপিত হয়েছিল, ইনি ছিলেন তাঁর জামাতা, ইলতুৎমিস (1211-36 খ্রীষ্টাব্দ)। ফিরোজশাহ তুঘলক 1368 সলে সাদা মার্বেলের দুটি বৃত্তাকার তলা নির্মিত করেছিলেন। তার গঠনের উন্নতিতে, বিভিন্ন তলগুলির উপর প্রস্তর-খোদিত অলঙ্কারিক শৃঙ্খলা সমন্বিত সম্মুখদিকে প্রসারিত অলিন্দ বা বারান্দা রয়েছে।

72.5 মিটার উচ্চতা ও 379-টি সিঁড়ি সমন্বিত, এটি ভারতের সর্বোচ্চ প্রস্তর নির্মিত টাওয়্যার বা স্তম্ভ। এছাড়াও এটি দিল্লীর এক অন্যতম স্বীকৃত ল্যান্ডমার্ক।

কুতুব মিনারের মধ্যে, কুতুব-উদ্দিন-আইবক দ্বারা ধ্বংসীভূত জৈন ও হিন্দু মন্দিরের নির্জন মঠ ও উৎকীর্ণ স্তম্ভগুলির দ্বারা সীমাবদ্ধ একটি লম্ব আকৃতির প্রাঙ্গন রয়েছে। এই ঘটনাটি স্মৃতিস্তম্ভের মূখ্য পূর্বীয় দ্বারের উপর একটি শিলালিপি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। কুতুব ভবনটির একটি দেওয়ালে সংস্কৃত ভাষায় একটি শিলালিপি রয়েছে, যেটিতে বর্ণিত আছে কুতুব মিনার বিষ্ণুপদ নামে অভিহিত ছিল। এটি খীষ্টিয় চতুর্থ শতাব্দীতে স্থাপিত হয়েছিল।

কুতুব মিনার ভবনের মধ্যে একটি লৌহ স্তম্ভ রয়েছে। ব্রাহ্মী লিপিতে একটি শিলালিপির স্বীকারোক্তি রয়েছে। শিলালিপিটিতে ব্যাখায়িত রয়েছে যে, এই স্তম্ভটি চন্দ্র নামে একজন মহা শক্তিধর রাজার স্মরণার্থে কৃষ্ণপদ পাহাড়ের উপর একটি বিষ্ণুধ্বজা হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। এই লৌহ স্তম্ভটির মরিচা প্রতিরোধের ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের হতবুদ্ধিকর করে তুলেছিল।

কুতুব মিনার বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্প ও বজ্রাঘাতের দরুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, এটি বিভিন্ন শাসকদের দ্বারা সময়ে সময়ে সংস্কারও করা হয়েছে। মিনারটি শীর্ষদেশ থেকে মাত্র 25 সেন্টিমিটার ঝুঁকে আছে, তা সত্ত্বেও যদিও এটি নিরাপদ, তবু এখনো বৃষ্টির জলের চোয়ানির দরুণ স্মৃতিস্তম্ভের ভিতের দুর্বলতা এড়াতে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

1981 সালেরও আগে, জনসাধারণের জন্য স্মৃতিস্তম্ভটির ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি ছিল। তবে, এক গুরুতর আকস্মিক দুর্ঘটনা (1981 সালের 4-ঠা ডিসেম্বর স্তম্ভটির মধ্যে আকস্মিক বিদ্যূৎ ঘাটতির আতঙ্কে ছত্রভঙ্গের সময় 45 জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়)-র পর কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ বিভাগে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।

কুতুব মিনারের নিকটবর্তী বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ পরিদর্শনমূলক স্থানের মধ্যে রয়েছে আনসাল প্লাজা, কেল্লা রাই পিথোরা, মঠ কি মসজিদ, লাল কেল্লা, গার্ডেন অফ ফাইভ সেন্সেস, আলই দরওয়াজা, আলই মিনার, বাহাই লোটাস মন্দির, দৈনন্দিন শিল্পকলার সংস্কৃতি মিউজিয়াম এবং আই.এন.এ. মার্কেট ইত্যাদি। আপনি যদি একজন গল্ফ প্রেমী হন, তবে আপনি দিল্লী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (দিল্লী ডেভলোপম্যান্ট অথরিটি) দ্বারা পরিচালিত কুতুব গল্ফ ক্ষেত্র পরিদর্শনেও যেতে পারেন।

কুতুব মিনার সম্পর্কে তথ্যাবলী

  • 1993 সালে কুতুব মিনার একটি ইউনেস্কো (ইউ.এন.ই.এস.সি.ও) ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্যময় স্থান) হিসাবে মনোনীত হয়েছে।
  • এটি 14.32 মিটার বুনিয়াদ থেকে ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হতে হতে 72.5 মিটার উচ্চতায় গিয়ে 2.75 মিটার সরু হয়েছে।
  • স্তম্ভটি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ভাস্কর্য দ্বারা আবৃত।
  • পবিত্র কোরাণ থেকে শ্লোক (স্তবক)-এর সঙ্গে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
  • স্তম্ভটিতে 5-টি তল আছে, প্রতিটি তলে একটি করে বারান্দা আছে।

কুতুব মিনারের অবস্থান

ভারতের, নতুন দিল্লীর মেহরৌলিতে অবস্থিত কুতুব মিনার, ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র 10.8 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গাড়ির মাধ্যমে নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন থেকে মিনারটিতে পৌঁছাতে মাত্র আধ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশন থেকে মিনারটিতে পৌঁছাতে আপনি ক্যাবও নিতে পারেন। একটি দারুণ সড়ক সংযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্মৃতিস্তম্ভটি সু-সংযুক্ত রয়েছে। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন বেসরকারি এবং সরকারি বাসগুলির দ্বারা সুস্থ সংযোগ ব্যবস্থা হিসাবে প্রস্তাবিত বাসের মাধ্যমে ভ্রমণ করাকেও বেছে নিতে পারেন। কুতুব মিনার হল দিল্লি মেট্রোর সবচেয়ে নিকটবর্তী স্টেশন। জামা মসজিদ থেকে এই স্মৃতিস্তম্ভটিতে পৌঁছাতে প্রায় আধ ঘন্টার মত সময় নেয়।

ঠিকানা : কুতুব মিনার ঠিকানা : মেহরৌলি, নতুন দিল্লী, দিল্লী – 110030.
অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ : 28.5244083, 77.1854630.

কুতুব মিনার পরিদর্শনের সেরা সময়

কুতুব মিনার সারা বছর ধরে খোলা থাকে। তবে, অক্টোবর থেকে মার্চের মাসগুলিতে আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকার দরুণ এইসময়ই হল কুতুব মিনার পরিদর্শনের সেরা সময়।

কুতুব মিনার দর্শনের সময়

কুতুব মিনার দর্শনের সময় হল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

কুতুব মিনার টিকিট

ভারতীয়দের জন্য প্রবেশ মূল্য হল ভারতীয় মূল্যে 10/- টাকা, অন্যদিকে বিদেশীদের জন্য ভারতীয় মূল্যে 250/- টাকা। 15 বছরের নীচে শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।

কুতুব মিনারের উপর আরোও তথ্য

  • কুতুব মিনার পরিচালনার দায়িত্বে কে রয়েছেন?
    কুতুব মিনার ধ্বংসাবশেষটি ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়।
  • কুতুব মিনারের উপর দূষণের প্রভাব কি কি?
    দিল্লী শহরের দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে কুতুব মিনার স্মৃতিস্তম্ভটির বর্ণ ম্লান হয়ে পড়ছে।
  • স্মৃতিস্তম্ভটির কাছে আসন্ন ভয়াবহতা কি?
    ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে, বিমানের অপসরণ ও অবতরণ, কুতুব মিনারের আসন্ন ভয়াবহতার সংকেত জাহির করে।


* সর্বশেষ সংযোজন : August 21, 2015

Published On: Friday, August 21st, 2015