ভারতের হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত ধরমশালা শহরটি, দলাই লামা-র আবাসস্থল হিসাবে সুপরিচিত। ফলস্বরূপ, তিব্বতীয় সংস্কৃতি এই অঞ্চলে বেশ বিশিষ্টভাবে প্রকট এবং পর্যটকরা প্রকৃতপক্ষে তিব্বতে না গিয়েই তিব্বতী সংস্কৃতির অনুভূতি গ্রহণের জন্য এই শহর পরিভ্রমণে আসে।
ধরমশালার আকর্ষণ
কাংড়া শিল্পের মিউজিয়াম : নামের বাস্তবিকতা অনুসারে, মিউজিয়ামটি বেশ কিছু কাংড়া-শৈলী শিল্পকর্মকে ধারন করে রয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র অঙ্কনচিত্র, মন্দিরের খোদাইকার্য, বুননকার্য, হাতিয়ার, পালকি, সূচিকর্ম এবং আরোও অনেক জিনিষ।
সূগলাগখাঙ্গ ভবন : এটি বৃহত্তম তিব্বতি মন্দির যেটি তিব্বতের বাইরে অবস্থিত। মন্দিরটিতে শাক্যমুনি বু্দ্ধের সুন্দর মূর্তি ও ধ্যান সভাগৃহ রয়েছে। আপনি তিব্বতিয় প্রার্থনা চক্রকে যত পারেন দ্রত ঘুরিয়ে আপনার ভাগ্য জানার ইচ্ছাও পূর্ণ করতে পারেন। ধূপকাঠির সুবাস, প্রার্থনার প্রশান্ত শব্দ ও সন্ন্যাসীদের বিভিন্ন ধ্যানমগ্ন চিত্র নিশ্চিতরূপে আপনার আত্মাকে কিছুটা শান্তি দিতে পারে। এছাড়াও আপনার আত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য, আপনি নীচ তলে অবস্থিত ক্যাফে থেকে উদর পুরণের জন্য কিছু সুস্বাদু নিরামিষ খাবার নিতে পারেন।
তিব্বত মিউজিয়াম : যারা তিব্বতি সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং অন্বেষণ করতে চান, তাদের জন্য ধরমশালার ম্যাকলিওড গঞ্জের প্রধান মন্দির প্রাঙ্গনের অভ্যন্তরে অবস্থিত, তিব্বত মিউজিয়াম, তিব্বতের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে বিবৃত করে। তারা তিব্বতি ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং ভ্রমণীয় মিউজিয়াম উপকরণ, ক্যাটালগ (সূচী-তালিকা) ও পত্রিকা প্রদান করে।
সঞ্চালিত শিল্পের তিব্বতি প্রতিষ্ঠান : এটি এমন একটি মঞ্চ যেখানে আপনি ঐতিহ্যপূর্ণ তিব্বতি নৃত্য ও সঙ্গীতের আভাসকে অনুধাবন করতে পারেন। এছাড়াও তিব্বতের থিয়েটারি ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে, সমসাময়িক নাটকও সম্পাদিত হয়।
নাম আর্ট গ্যালারী : গ্যালারীটিতে এলিজাবেথ বুকমান ও এ.ডব্লু.হাল্যেট-এর দ্বারা বেশ কিছু জলরং, আক্র্যেলিক ও তৈল চিত্র প্রদর্শিত রয়েছে। আপনি যদি একজন শিল্প রসিক হন, তবে এটি আপনার জন্য অবশ্য দর্শনীয় স্থান হবে।
ধরমকোট : এটি ধরমশালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং পর্বতের আশ্চর্য্যজনক দৃশ্যের দরুণ এটি একটি বড় পিকনিক স্থল রূপে উপলব্ধ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠান : ধরমশালায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে দর্শকরা যোগব্যায়াম, ধ্যান, আরোগ্য নিরাময় এবং এমনকি প্যারাগ্ল্যাইডিং-য়ের উপর কোর্সের জন্যও নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।
ধরমশালায় থাকার জায়গা
জনপ্রিয়তার দরুণ এখানে ভ্রমণার্থীদের কাছে বেশ কিছু থাকার জায়গার বিকল্প রয়েছে। হোটেল শিখর এবং পবন অতিথিশালা শহরের দারুণ সাশ্রয়ী হোটেল। অন্যদিকে মাঝারি মানের হোটেলের জন্য পর্যটকদের কাছে বব’স আ্যন্ড বার্লি ও ভিলা প্যারাডাইসো ভালো বিকল্প হিসাবে রয়েছে। একটু অমিতব্যয়ী মস্তিষ্কের পর্যটকদের জন্য দ্য ফরচুন্ পার্ক মোক্ষ ও ওয়েলকাম হেরিটেজ গ্রেস কটেজ হোটেল অসাধারণ বিকল্প রূপে রয়েছে।
ধরমশালা, ভারতের হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলায় অবস্থিত।
পৌঁছানোর উপায়
বিমান মাধ্যমে
গগ্গল বিমানবন্দর হল শহরের নিকটবর্তী বিমানবন্দর। 15 কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত, এই দূরত্ব অতিক্রম করতে ট্যাক্সির মাধ্যমে প্রায় আধ ঘন্টা সময় লাগে।
রেল মাধ্যমে
কাংড়া রেলওয়ে স্টেশন হল ধরমশালার নিকটস্থ রেল স্টেশন। তবে, ট্রেনগুলি সাধারণত খুবই ধীরগতির। এই জন্য, অনেক ভ্রমণার্থী পাঠানকোট জংশন রেলওয়ে স্টেশনে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে এবং সেখান থেকে কোনও বাস বা ট্যাক্সির মাধ্যমে গেলে আরোও দ্রুত হয়। পাঠানকোট জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি ট্যাক্সির মাধ্যমে এই শহরে পৌঁছাতে প্রায় 2 ঘন্টা সময় লাগে।
সড়ক মাধ্যমে
ধরমশালা, সড়ক মাধ্যমে এই অঞ্চলের প্রায় সমস্ত প্রধান শহরগুলির সঙ্গে সু-সংযুক্ত রয়েছে; যেমন – দিল্লী, চন্ডীগড় ও পাঠানকোট এবং এখানে বেশ কিছু বাসও রয়েছে যেগুলি ধরমশালা থেকে এই সমস্ত শহরগুলির মধ্যে যাতায়াত করে।
গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা বেশ খানিকটা মনোরম থাকার দরুণ এই সময়ই হল শহরটি পরিদর্শনের সেরা সময়।
দলাই লামার দর্শন পাওয়া কি সম্ভব?
দলাই লামার দর্শন তখনই সম্ভব, যখন বৈধ কারণ সহ কয়েক মাস আগে থেকে অগ্রিম আবেদন করা যায়।
ধরমশালার আবহাওয়া কেমন?
ধরমশালার আবহাওয়া, গ্রীষ্মকালে সাধারণত বেশ খানিকটা মনোরম থাকে, তবে এই তাপমাত্রা ধীরে ধীরে নামতে নামতে শীতকালে হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়। শীতকালে ধরমশালায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকদের ভারী পশমী পোশাক পরিধান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
* সর্বশেষ সংযোজন : July 09, 2015