সাহারা মরুভূমি

সাহারা মরুভূমি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মরুভূমি

আফ্রিকার সুদূর উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত, সাহারা মরুভূমি বা গ্রেট মরুভূমি, মরুভূমিতে উটে চড়ে ভ্রমণের এক রোমাঞ্চকর আনন্দের উপলব্ধি ও দীপ্তিমান তারকাময় আকাশের নীচে শিবির করার জন্য এক আদর্শ স্থান। এটি এক চরম প্রখরিত তাপমাত্রার জায়গা – দুপুরে প্রগাঢ় তাপ এবং রাত্রিতে হিমপ্রবণ ঠান্ডা, এই মরুভূমি অঞ্চলের এক সাধারণ ব্যাপার। 1922 সালে, লিবিয়ার আল আজিজিয়া-য় (136 ডিগ্রী ফারেনহাইট) তাপমাত্রা, এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রূপে নথিভূক্ত হয়ে রয়েছে। সাহারা মরুভূমির আকার ও জলবায়ু, ইতিহাসের সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। 8000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দেরও আগে, মরুভূমিটি আরোও বড় এবং সম্ভবত আরোও শুষ্ক ছিল বলে মনে করা হয়। ভৌগোলিকদের মতে, এই অঞ্চলে গাছপালা ও জীবজন্তু ছিল। জলবায়ুর পট পরিবর্তনের সাথে সাথে (নিষ্পাদপ প্রান্তর) সাভানা, ঊষর ভূমিতে পরিণত হয়ে যায়। তুষার পরবর্তী যুগে বরফ আচ্ছাদন অপসারণের পর থেকে সাহারা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে তার বর্তমান যে গঠন তার শুরু হয়। বর্ষা দিন দিন দক্ষিণের দিকে ঢলে পড়তে থাকে; বাস্তবিকভাবেই, এই বর্তমান শুষ্ক গরম আবহাওয়া প্রায় 13,000 বছর ধরে সাহারা মরুভূমির সহজাত বৈশিষ্ট্য হয়ে রয়েছে। সাহারা মরুভূমির ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনায় সাধারণত বিশাল, হিংস্র, চমৎকার এই প্রকারের বেশ কিছু বিশেষণ ব্যবহার করা হত। প্রধানত বালি ও বালিয়াড়ি দ্বারা আবৃত এই জমির মরুদ্যানগুলির উপস্থিতির কারণে গতানুতিকতা নষ্ট হয়ে গেছে, যা এই অঞ্চলের গাছপালা ও জীবজন্তুদের জীবনধারণে অনুকূল হয়ে উঠেছে। গ্রানাইট ও বেলেপাথরের বিভিন্ন অনুর্বর পর্বতমালার আবাসস্থল, এই মরুভূমি বিভিন্ন প্রকারের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। নুড়ি সমভূমি, মালভূমি, নদী, ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর, গাছপালা ও উপত্যকা এই মরুভূমি জুড়ে প্রসারিত রয়েছে। স্বচ্ছ নীল আকাশের নীচে স্বর্ণ বালুকার এই ভূমি সত্যই এক সৌন্দর্য্য মূর্তি।

সাহারা মরুভূমির অনেক অংশ সুগম নয় এবং একাকিত্ব জনহীন মরুপ্রদেশ অভিযাত্রীদের জন্যও প্রতিকূল। বিশ্বের এই অংশ 6,000 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকে মানুষের বসবাসের জন্য পরিচিত। মিশরীয় ও ফিনিশীয় সভ্যতাগুলি মরুভূমি কেন্দ্রিক ছিল। সাহারায় বসবাসকারী উপজাতি অধিবাসীদের অধিকাংশই যাযাবর গোষ্ঠীর ছিল, যারা মরুভূমি জুড়ে ভ্রমণ করে বেড়াত। উর্বর অঞ্চল ও মরুদ্যানগুলির চত্বরে নগরের সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে। নুড়ি, বালিয়াড়ি, বিক্ষিপ্ত মরুদ্যান, পর্বত মালা, প্রান্তর এবং যাযাবর বেদুঈন-এর এই তরঙ্গায়িত ভূমি, সারা বিশ্ব থেকে আগত পর্যটকদের একটি চিরন্তন কমনীয়তায় আকর্ষিত করে। সাহারা ভ্রমণের অন্য আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হল মরভূমি সাফারি ও ক্যামেল ক্যারাভ্যান। ক্যামেল ক্যারাভ্যান সাধারণত টিম্বাকটু থেকে শুরু হয় এবং টাউডেন্নি ও আরৌয়েন-এর মরুদ্যান কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়। এই ট্র্যাক বা ভ্রমণ চাহিদায় সংগঠিত হয়। ক্যামেল ক্যারাভ্যান সকালে শুরু হয় এবং সারাদিন ধরে চলতে থাকে এবং সেটি ভ্রমণার্থীরা কতদূর যেতে চায় তার উপর নির্ভর করে। স্থানীয় সাপুড়ে, রজ্জুনর্তক ও বাজিকরদের দ্বারা অনুষ্ঠিত ক্রিয়াকলাপ হল রাত্রিতে বিনোদনের উৎস। যারা প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও রোমাঞ্চকর অনুভূতির স্বাদ উপলব্ধি করতে চান, সেই সমস্ত ব্যাক্তিদের জন্য সাহারা সাফারি আদর্শ। সাহারায় ভ্রমণের চারটি প্রধান উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল উটে চড়ে ভ্রমণ, মরুভূমির জনশূন্যতা, মারাকেশ এবং কসবা। ঝিলমিল করা তারকাময় আকাশের নীচে বালিয়াড়ির নির্জনতার মধ্যে শিবির সঙ্গে মিশ্র স্থানীয় উপজাতিদের উষ্ণ আতিথেয়তা, সারাজীবনের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।

সাহারা মরুভূমি সম্পর্কে তথ্যাবলী

  • সাহারা মরুভূমি নামটি, এক আরবীয় শব্দ “শারা” থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ হল মরুভূমি।
  • 9,400,000 বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে আবৃত, এটি বিশ্বের সবচেয়ে এক অন্যতম উষ্ণ মরুভূমি।
  • মরুভূমিটি বিভিন্ন দেশের উপর বিস্তৃত রয়েছে; যার মধ্যে হল পশ্চিমী সাহারা, ঈরিট্রিয়া, তিউনিশিয়া ইত্যাদি।

সাহারা মরুভূমির অবস্থান

সাহারা মরুভূমিটি, আফ্রিকার উত্তরীয় প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত; যার মধ্যে রয়েছে মরক্কো, আলজেরিয়া, মরিশানিয়া, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, ঈজিপ্ট, সূদান এবং অন্যান্য। মরুভূমির মধ্যে ভ্রমণযাত্রা ঔয়ারজাজাত থেকে শুরু হয়, এটি মরুভূমির দ্বার নামেও অভিহিত। নিকটবর্তী বিমানবন্দর, মেনারা বিমানবন্দর প্রায় 232 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আপনি ঔয়ারজাজাত থেকে সড়ক মাধ্যমে সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে বিমানবন্দরে পৌঁছে যাবেন।

সাহারা মরুভূমি পরিভ্রমণের সেরা সময়

সাহারা মরুভূমিতে পরিভ্রমণের সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী।

সাহারা মরুভূমির নিকটবর্তী আকর্ষণ

এন’জামেনা, কানো, বামাকো, কোলডা, কোন্টাগোরা, মৈডুগুড়ি, ডামাতূরু এবং কাটশিনা।

* সর্বশেষ সংযোজন : July 22, 2015

Published On: Wednesday, July 22nd, 2015