লন্ডন শহরের ক্রমবর্ধমান বিস্ময়কর উন্নতির পিছনে টেমস নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । মধ্যযুগের সময়কালে লন্ডন এক অন্যতম বিখ্যাত শহর ছিল এবং জাহাজ(নৌ-বানিজ্য) দ্বারা তার সম্পদ বর্ধিত করতে থাকে যা সারা বিশ্বে ভ্রমণ করত এবং লন্ডন বন্দরের নোঙ্গর ঘাঁটিতে ফিরে আসত।
প্রাথমিকভাবে পরিবহণ ও বিনোদনের জন্য এই নদী আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়। টেমস নদী আমোদ-প্রমোদ এবং বানিজ্যের এক নদী।আমোদ-প্রমোদ ও বিনোদনের একটি উৎস হিসাবে টেমস নদীর জনপ্রিয়তা ভিক্টোরিয়ান আমল থেকেই চলে আসছে এবং আনন্দময় সমুদ্র ভ্রমণের ধারণা একটি স্বতন্ত্র্র ভিক্টোরিয়ান কৌশল।
আপনি লন্ডনের এই নদীতে যেকোন ক্রুজেই ভ্রমণ করুন না কেন আপনি একটি অসাধারণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পাবেন এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন। এখানে বহু অসাধারণ ক্রুজ রয়েছে, তার মধ্যে কিছু হল - সিটি ক্রুজ, ক্যাটামারান ক্রুজ ও সার্কুলার ক্রুজ।উদাহরণস্বরূপ ধরুন, ক্যাটামারান ক্রুজ যা উভয়- বৃত্তাকার ভাবে সেইসাথে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ প্রদান করে।অন্যদিকে সার্কুলার ক্রুজ এমব্যাঙ্কমেন্ট জেটি থেকে প্রস্থান করে সেন্ট ক্যাথারিন জেটি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যায়, যার মধ্যে আপনি নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলি অন্বেষণ করার সুযোগ পাবেন।
নৌচালন জল ক্রীড়া 1800 সালের প্রথম দিকে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যার ফলে নৌচালন ক্লাব গুলি লন্ডনের টেমস নদীর চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং রিগাট্টা (নৌচালনা প্রতিযোগিতা) এখানকার এক জনপ্রিয় কার্যক্রম হয়ে ওঠে।বিখ্যাত হেনলি রিগাট্টা 1839 সাল থেকে চলে আসছে যা গ্রেট ব্রিটেনের এক অত্যন্ত জনপ্রিয় কার্যক্রম, যা প্রতি বছর জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও যতদূর জানা যায় রোয়িং, পুন্টিং এবং সেলিং টেমস নদীর কিছু জনপ্রিয় কার্যক্রম।
এখানকার আরো দুটি পরিদর্শনযোগ্য আকর্ষণীয় হল স্বয়ং এই নদী এবং টেমস নদীর হেনলিতে অবস্থিত রোয়িং মিউজিয়াম। ঐতিহাসিক নিদর্শনের কিছু নিদারুণ সংগ্রহ সহ এখানে একটি মিউজিয়াম রয়েছে। আপনি এই মিউজিয়ামে এক উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে টেমস নদীর ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং নৌচালন ক্রীড়ার বিবর্তন পরিবেশন করা দেখে সত্যিই আশ্চর্য হয় উঠবেন।
এছাড়াও মিউজিয়ামটি হেনলীর তাৎপর্য্যময়তা প্রদর্শিত করে এবং যা লন্ডনের মতো নয়, এটি রোয়িং মিউজিয়াম প্রত্যেকটি পরিদর্শনের জন্য মূল্য দিতে হয়। একটি ভিডিওর মাধ্যমে টেমস নদীর উপস্থাপনায়, যা হেলিকপ্টার থেকে এরিয়ালি ধারণ করা হয়েছে , দর্শকদের পরিচিত করায় যে টেমস নদীর উৎস সাগরের সাথে।
ব্রিটিশ লোকসাহিত্যে টেমস নদীর অবদান অপরিসীম এবং অসংখ্য লেখক, কবি এবং সাঙ্গীতিক তাদের বিভিন্ন শিল্প কর্ম, যেমন - উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা এবং সঙ্গীতে এই মহান নদীর নানাবিধ বৈশিষ্ট্য চিত্রিত করেছেন।
এই মহিমান্বিত এবং নিদারুণ নদী ছাড়া জীবন কি রূপ হতে পারে? টেমস নদী ইতিহাসের কিছু সবচেয়ে অত্যাশ্চর্য এবং আড়ম্বরপূর্ণ জল প্রদর্শনীর মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এক নদী উৎসব হল ডগেট’স রেস যা এই রেসের প্রবর্তক টমাস ডগেটকে সম্মান প্রদর্শন করতে নদীর নৌ-চালকদের দ্বারা 1751 সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।এই রেস প্রতি বছর 1লা আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
ইংল্যাণ্ডের বহু রাজা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা টেমস নদীর তীরে তাদের বিরাট দুর্গ ও কেল্লা নির্মান করেছিলেন যেগুলির মধ্যে কিছু কিছু আজও চোখে পড়ে।
টেমস নদী ইংল্যান্ডের দক্ষিণ অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়।এটি ইংল্যান্ডের সর্ব দীর্ঘতম নদী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দীর্ঘ নদী। একদিকে এই নদীর এক বিশাল অংশ মধ্য লণ্ডনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলেও এই নদী অন্যান্য বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়,যেগুলি হল - রিডিং, হেনলি অন টেমস, কিংস্টন-আপন-টেমস, উইন্ডসর এবং রিচমন্ড।
সাধারণত গ্রীষ্মকাল লন্ডন পরিদর্শনের সেরা সময় হিসেবে গণ্য হয়। তবে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত মেয়র টেমস উৎসব উপেক্ষা করা উচিৎ নয়।
নিকটস্থ আকর্ষণ: ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে, হাউস অফ লর্ডস, বিগ বেন, ইম্পেরিয়াল ওয়ার মিউজিয়াম, লন্ডন টাওয়ার।
* সর্বশেষ সংযোজন : December 08, 2015