লন্ডনের চিড়িয়াখানা বেশ পুরানো এবং ইতিহাসের একটু ছোঁয়া রয়েছে। এটি 1828 সালে খোলা হয় এবং শুরুর সময়ে এই চিড়িয়াখানা বিভিন্ন বিচিত্র প্রাণীর আবাসস্থল ছিল এবং বহু প্রখ্যাত জৈব বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এখানে বসবাসকারী প্রজাতিদের উপর বহু নিয়মিত গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।
সময়ের সাথে সাথে লন্ডনের চিড়িয়াখানা বিশ্বের এক অন্যতমবিখ্যাত চিড়িয়াখানা হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।এটি প্রথম চিড়িয়াখানা যেখানে প্রথম সরীসৃপ আবাস্থল, প্রকাশ্য অ্যাকোয়ারিয়াম, কীট পতঙ্গের আবাসস্থল প্রবর্তন হয় এবং এছাড়াও এটি প্রথম শিশুদের চিড়িয়াখানা।
ব্রিটেনে অন্যান্য বহু চিড়িয়াখানা আছে কিন্তু কোনটাই আকার ও প্রাণী প্রজাতির প্রাপ্যতা উভয়ের দিক দিয়ে লন্ডনের চিড়িয়াখানার মত ব্যপক নয়। লন্ডনের চিড়িয়াখানার এই সফর আদর্শগতভাবে অনন্য স্তন্যপায়ী প্রানীদের দিয়ে শুরু হয় যারা জনপ্রিয় "সোবেল প্যাভিলিয়ন" হিসেবে অভিহিত যা বানর এবং বনমানুষের আবাসস্হল।কাঠবিড়াল বানর থেকে গরিলা এবং ম্যাকাও পর্যন্ত সোবেল প্যাভিলিয়ন তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।সোবেল প্যাভিলিয়ন সম্পর্কে সব থেকে আকর্ষণীয় ব্যাপারটি হল এখানকার বসবাসীদের জন্য প্রদিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রিমাত্রিক স্থান যার ফলে বিশেষ করে শিম্পাঞ্জিরা খুব প্রাণবন্ত ভাবে ঝুলে থাকতে পারে।
লন্ডনের চিড়িয়াখানার অ্যাকোয়ারিয়াম হল আরেকটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় স্থান এবং বিরল থেকে কিছু বিরলতম সামুদ্রিক মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণী এখানে দেখা যায়।এই অ্যাকোয়ারিয়াম একটি লম্বা কক্ষে অবস্থিত এবং এখানে প্রায় দুই লক্ষ গ্যালন বিশুদ্ধ জল এবং শত শত ট্যাংক সামুদ্রিক জল রয়েছে।
আপনি কি কখনও একটি বিষাক্ত গোখরো দেখেছেন? যদি না হয় তাহলে এখানকার অসাধারণ সরীসৃপ আবাসস্থল পরিদর্শন করুন। গোখরো ছাড়াও এখানে বহু অনন্য সাপ ও গিরগিটি রয়েছে।
তারপর, এখানে হাতির প্যাভিলিয়ন রয়েছে এবং একটা কথা সকলেরই মানা উচিৎ তা হল এই প্যাভিলিয়ন যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। এই কারণে এই সীমিত স্থান থেকে কিছু হাতিকে এই অসাধারণ চিড়িয়াখানার বহিরঙ্গনের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যাতে দর্শকরা ধীরেসুস্থে হেঁটে এই চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করতে পারে।
এখানে একটি অসাধারণ পরিদর্শনযোগ্য গণ্ডার আবাসস্থল রয়েছে এবং দর্শকরা এই আবাসস্থলের নবাগত বসবাসকারীকে খুব পছন্দ করেছেন – বেন, যাকে ভুর ক্রালভ, চেকোস্লোভাকিয়া থেকে আনা হয়েছে।কংক্রিট সেতুর সঙ্গে সম্পন্ন, নিবন্ধিত পেঙ্গুইন পুল হল এক অসাধারণ উত্তেজনাময় অনুভূতি।
অগ্রণী চিড়িয়াখানা হওয়ায় লন্ডনের চিড়িয়াখানা শিশুদের জন্য একটি অনন্য এলাকা হিসেবে প্রমানিত হয়েছে।অন্যান্য চিড়িয়াখানাগুলি শিশুদের মনোরঞ্জনের দিকে সেরকম জোর দেয়না কিন্তু লন্ডনের চিড়িয়াখানায় বহু বন্ধুত্বপূর্ণ প্রাণী রয়েছে যেমন – ভেড়া, খরগোশ, শূকরছানা ইত্যাদি যাদের সাথে শিশুরা খেলা করতে পারে এবং তাদেরকে স্পর্শও করতে পারে।
চোর প্যাভিলিয়নের একটি ঝলক ছাড়া লন্ডন চিড়িয়াখানা পরিদর্শন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।এটি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আবাসস্থল যেখানে বিশ্বের সেরা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংগ্রহ আছে। নীচ তলা কেবলমাত্র দিবালোক প্রাণীদের জন্য তৈরি, অন্যদিকে বেসমেন্টটি নিশাচর প্রাণীদের জন্য তৈরি, যেমন – তাসমানিয়ান ডেভিল ও বাদুড়। লন্ডনের এই চিড়িয়াখানায় কোয়ালা এবং পান্ডাও লক্ষণীয়।
সবমিলিয়ে লন্ডনের চিড়িয়াখানার একটি দর্শন অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কিছু লুপ্তপ্রায় প্রাণী ও প্রায় 750টিরও অধিক প্রজাতির প্রাণীর দর্শন সহ লন্ডন চিড়িয়াখানার একটি পরিদর্শন সত্যিই অত্যন্ত মূল্যবান।
লন্ডনের চিড়িয়াখানা এই শহরের কেন্দ্রের ডান দিকে রিজেন্ট’স পার্কের উত্তর দিকে অবস্থিত। এই চিড়িয়াখানা যানবাহনের বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা পৌঁছানো সম্ভব, যেমন – বাস, টিউব এবং রেল।নিকটবর্তী টিউব স্টেশন গুলি হল – ক্যামডেন টাউন, রিজেন্ট পার্ক এবং বেকার স্ট্রিট।
লন্ডন চিড়িয়াখানা বড়দিন ছাড়া (25শে ডিসেম্বর)বছরের প্রতিদিন খোলা থাকে। 16 বছরের কম বয়সী শিশুদের একজন পূর্ণবয়স্ক ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি নেই। চিড়িয়াখানা খোলার সময় সারা বছর ধরে পরিবর্তিত হতে থাকে।লন্ডন চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময় সকাল 10:00 টা থেকে শুরু হয়।
নিকটবর্তী আকর্ষণ: প্রিমরোজ পর্বত, জিউইস মিউজিয়াম, মাদাম তুসো, শার্লক হোমস মিউজিয়াম
* সর্বশেষ সংযোজন : December 09, 2015