আইফেল টাওয়ার (ল্য ট্যূর আইফেল) বিশ্বের সবচেয়ে এক অন্যতম দৃষ্টান্তমূলক পরিকাঠামো, বার্ষিক প্রায় সত্তর লক্ষ জনসাধারণের দ্বারা পরিদর্শিত, স্থানটিকে সর্বাধিক পরিদর্শনীয় স্থান রূপে গড়ে তুলেছে। ইঞ্জিনীয়ার (প্রাকৌশলিক) গাসটেভ্ আইফেল-এর নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়, যাঁর প্রতিষ্ঠান এই টাওয়ারটির পরিকল্পনা ও নির্মাণ করেছিলেন। তিনি অন্য আরেকটি জনপ্রিয় স্মৃতিস্তম্ভের পরিকাঠামোর পরিকল্পনা বা ডিজাইন্ তৈরি করেছিলেন, যেটি হল – দ্য স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। এই টাওয়ারটি সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য হল যে – আইফেল, এই টাওয়ার বা মিনারটির ওপর 72 জন ফরাসি বৈজ্ঞানিক, গণিতজ্ঞবিদ ও ইঞ্জিনীয়ারের নাম, তাঁদের কৃতিত্বের অবদানের কথা মাথায় রেখে খোদাই করেছিলেন।
প্যারিসের একটি মহান দৃশ্য অবলোকনের জন্য দর্শকেরা সিঁড়ি বেয়ে বা লিফটের সাহায্যে টাওয়ারটির মধ্যে ত্রিস্তরীয় পর্যবেক্ষণ মঞ্চ বা রেস্তোঁরায় পৌঁছাতে পারেন। টাওয়ারটির ভিতরে অবস্থিত দুটি রেস্তোঁরা হল লে 58 ট্যূর আইফেল এবং লে জুলে ভার্ন। আইফেল টাওয়ার একটি বিশ্ববিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক, যেটি প্যারিসের প্রায় সমগ্র জায়গা থেকে দেখা যেতে পারে।
টাওয়ারটির একেবারে শীর্ষে ওঠার জন্য প্রায় 1,665-টি ধাপ রয়েছে। অন্যথায়, শীর্ষে ওঠার জন্য, টাওয়ারটির মধ্যে স্হাপিত লিফট বা এলিভেটারও ব্যবহার করা যেতে পারে। টাওয়ারটির মধ্যে বেশ কিছু লিফট (বৈদ্যূতিক উত্তোলক) রয়েছে। লিফটগুলির মধ্যে একটি লিফট নিম্ন তল থেকে দ্বিতীয় তল পর্যন্ত যায়। দুজোড়া যুগল-লিফট, দ্বিতীয় থেকে শীর্ষ তল পর্যন্ত সংযুক্ত রেখেছে। টাওয়ারটির মধ্যে আরোও পাঁচটি লিফট রয়েছে, প্রতিটি স্তম্ভে একটি করে এবং একটি ব্যাক্তিগত লিফট রয়েছে যেটি “জুলে ভার্ন” রেস্তোঁরার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য লৌহ নির্মিত জাফরি টাওয়ারটির তিনটি স্তর রয়েছে। তৃতীয় তলটি, পর্যবেক্ষণাগারটির সর্বশ্রেষ্ঠ মঞ্চ, এটির উচ্চতা প্রায় 279.11 মিটার (915.7 ফুট)। নিম্ন তল থেকে প্রথম তলে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে 300-টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। দ্বিতীয় তলে পৌঁছানোর জন্য আবার আপনাকে প্রথম তল থেকে 300-টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।তৃতীয় এবং সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর জন্যও সিঁড়ি রয়েছে, তবে জনসাধারণ এই স্তরে পৌঁছানোর জন্য একমাত্র লিফটই ব্যবহার করতে পারে।
টাওয়ারটি প্যারিসের এক বিশিষ্ট ল্যান্ডমার্ক এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্রের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।
খৃষ্টমাস (বড়দিন) হল আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের সেরা সময়। এইসময় প্যারিসের সমগ্র শহরগুলি আলোক-সজ্জায় আলোকিত হয়ে ওঠে এবং রাতের অন্ধকারে টাওয়ারটি ঝলমল করে, তখন এই চিত্র অনুপম গন্তব্যস্থলটি ঐন্দ্রজালিক বলে মনে হয়। এছাড়াও, খৃষ্টমাসের সময় প্যারিসে মরশুমি আই্যস স্কেটিং খেলার জন্য রিঙ্ক (স্কেটিংয়ের উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি বরফের আস্তরণময় স্থান) প্রতিস্থাপিত করা হয়।
আইফেল টাওয়ারের অপরিমেয় জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে টাওয়ারটির প্রতিকৃতি স্বরূপ বেশ কিছু উপহারের ধারণা সৃষ্টি হয়েছে; যেমন – ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি, লন্ঠন, কাপ হোল্ডার, শয্যা উপকরণ, জিপো বোতল উন্মোচক, ছুরি, পায়জামা, কবজ, বালিশ, কম্বল, ধাঁধা, পোস্টার (দেওয়াল চিত্র), বেলুন, কাকঁন, ক্রীড়া, কেক, শৌখিন আসবাব ইত্যাদি।
প্যারিসে গেলে, আপনি অবশ্যই আইফেল টাওয়ারের নিকটবর্তী লুভ্যর মিউজিয়াম, চ্যাম্প-ইলিসি, নটর্ ডেম, আর্ক ডি ট্রাইয়ামফ্ এবং মুস্যি ডি’ওর্স্যে পরিদর্শন করুন।
আইফেল টাওয়ার, ফ্রান্সে প্যারিসের সপ্তম অ্যারোঁদিসেমেন্ট-এর মধ্যে চ্যাম্প ডি মার্শ-এ অবস্থিত, যা শ্যেইন নদী থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
চ্যাম্প ডি মার্শ, 5 এভ্যিনিউ আ্যনাটোল ফ্রান্স, 75007 প্যারিস, ফ্রান্স।
টাওয়ারটি, ডিজনিল্যান্ড প্যারিস থেকে মোটামুটি প্রায় 59 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পৌঁছতে প্রায় 45 মিনিট থেকে 1 ঘন্টার মতো সময় লাগে, তবে নির্বাচিত রুট ও ট্রাফিকের ওপর নির্ভর করছে।
লুভ্যর থেকে এর দূরত্ব মাত্র 4.1 কিলোমিটার। 8 মিনিটের মধ্যেই টাওয়ারটিতে পৌঁছানো যায়, কিন্তু ট্রাফিকের দরুণ পৌঁছতে 15 মিনিট বা তার বেশিও সময় লাগতে পারে।
নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন্ হল দ্য চ্যাম্প্ ডি মার্শ ট্যূর আইফেল মেট্রো স্টেশন্।
বসন্ত ও শরৎকাল, প্যারিস এবং আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের জন্য শ্রেষ্ঠ ঋতু। গ্রীষ্মকালের প্রকৃত মরশুমের সময় যারা ঘুরতে যাবেন তাদের তুলনায় এই অসময়ের দিনে ভ্রমণার্থীরা কম ভিড়ে, এক মনোরম আবহাওয়ার অনুভূতি নিতে পারবেন।
আইফেল টাওয়ার সারা বছর ব্যাপী খোলা থাকে – কোনওদিন বন্ধ থাকে না!
বসন্তকালের ছুটি এবং ইস্টার সপ্তাহান্তের দিনগুলিতে মধ্য-রাত্রি পর্যন্ত খোলা থাকার সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
4 বছরের নীচে শিশুদের জন্য আইফেল টাওয়ারে বিনামূল্যে অবাধ প্রবেশ উপলব্ধ রয়েছে। এখানে একক ব্যাক্তি, সমষ্টি ও বিকলাঙ্গ, পাশাপাশি প্রতিবন্ধী সহগামীদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ ধার্যমূল্য রয়েছে। টিকিটের ধার্য মূল্য হলঃ
ভিড় এড়াতে, আপনি অনলাইন-এর মাধ্যমে টিকিট কিনতে পারেন:
www.tour-eiffel.fr/en/preparing-your-visit/buying-your-tickets.html
আইফেল টাওয়ার, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত্রি 1.00-টা. পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় 5 মিনিটের জন্য ঝলমল করে ওঠে।
ফরাসি ভাষায় এটি ট্যূর আইফেল নামে অভিহিত রয়েছে।
1889 সালে এই স্তম্ভটির নির্মাণে প্রায় 7,800,000 গোল্ড ফ্রাঙ্কস ব্যয় করা হয়েছিল।
প্যারিস লাস্ ভেগাস -আইফেল টাওয়ারটি এক অর্ধাকৃতি প্রতিকৃতি। লাস্ ভেগাস-এ যারা আইফেল টাওয়ারের অভিজ্ঞতা নিতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এটি এক উল্লাসজনক স্থান। একটি কাঁচের তৈরি লিফটে চড়ে শহরটি 360-ডিগ্রী পরিদর্শনের জন্য আপনাকে 460 ফুট উচ্চতায় এই প্রতিকৃতি টাওয়ারটির শীর্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।
2013 সালের 27-শে জুলাই, আইফেল টাওয়ার বজ্রবিদ্যূতাহত হয়েছিল।
1889 সালে, যখন টাওয়ারটি স্থাপিত হয়, এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ লম্বা ভবন হয়ে উঠেছিল।
বিশ্বে আইফেল টাওয়ারের 9-টিরও বেশি প্রতিকৃতি রয়েছে। এগুলির মধ্যে বিশিষ্ট কয়েকটি হল – লাস্ ভেগাস (নেভাদা), ডূরাঙ্গো (মেক্সিকো) এবং শেনঝেন্ (চীন্)।
উষ্ণতার সম্প্রসারণের কারণে গ্রীষ্মকালে এটির দৈর্ঘ্য বৃ্দ্ধি পায়।
সূর্যের উষ্ণতার কারণে লৌহের সম্প্রসারণের দরুণ আইফেল টাওয়ারটি হেলে পড়েছে।
আইফেল টাওয়ারটি নির্মাণ হতে 2 বছর 2 মাস 5 দিন সময় লেগেছিল।
এই অঞ্চলের লুভ্যর থেকে আইফেল টাওয়ার এবং প্লেস দ্যি লা কনকর্ড থেকে গ্র্যান্ড এবং পেটিট্ প্যালেইস 1991 সালে এক বিশ্ব ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে।
সংবাদে আইফেল টাওয়ার
* সর্বশেষ সংযোজন : July 01, 2015