গ্যাংটক, ভারতীয় রাজ্য সিকিমের রাজধানী এবং তার বৃহত্তম শহর। হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত এটি একটি কমনীয় এবং চিত্রোপম জায়গা। 1840 সালে শহরটি বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, এনচ্যে মঠের নির্মাণের পর এটি একটি বৌদ্ধ তীর্থভূমি রূপে ঘোষিত হয়। 1894 সালে, চোগিয়াল বা সিকিমের শাসক তাদের রাজধানী গ্যাংটকে স্থানান্তরিত করেন।
গ্যাংটক ও তার পাশাপাশি পরিবেষ্টিত অঞ্চলগুলি বেশ সুন্দর এবং পাহাড় ও উপত্যকার চমৎকার দৃশ্য প্রদান করে এবং এই জন্যই গ্যাংটক ও পাশাপাশি পরিবেষ্টিত অঞ্চল পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের আশীর্বাদে ধন্য এই অঞ্চল প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছে। রডোডেনড্রন ও অর্কিডের ন্যায় ফুল, সেইসঙ্গে লাল পান্ডা ও লাল রঙ্গীন পক্ষীজাতীয় প্রাণীও এখানে সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়। এখানকার কয়েকটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল- কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান ও ফামবং লো বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
যে সমস্ত ভ্রমণার্থীরা গ্যাংটকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সাক্ষী হতে এখানে আসেন, তাদের গ্যাংটক ও পার্শ্ববর্তী এলাকা হতাশ করবে না। এই অঞ্চলে অনেক হ্রদ, পর্বত ও উষ্ণ প্রসবণ রয়েছে, যেগুলি পর্যটকেরা ঘুরে দেখতে পারেন। যদিও এখানে অনেক হ্রদ রয়েছে তবে এদের মধ্যে সোমগো ও মেনমেকো হ্রদ হল এই অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় হ্রদ। এর অবস্থানের দরুণ, গ্যাংটক প্রচুর পর্বতের আশ্চর্য্যজনক দৃশ্য দেখার প্রস্তাব নিবেদন করে; যাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হল মাউন্টেন খাংচেনডোংজা বা কাঞ্চনজঙ্ঘা, এটি বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। উষ্ণ প্রসবণগুলি সালফারের উচ্চ ঘনত্বের দরুণ তাদের থেরাপিউটিক বা ভেষজ মানের জন্য পরিচিত। পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রসবণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইউম সামডোং উষ্ণ প্রসবণ এবং রেশি উষ্ণ প্রসবণ।
গ্যাংটক সম্পর্কে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ জিনিষ হল যে, এই অঞ্চলের অন্যান্য শহরগুলির অসদৃশ এটি বেশ বিশ্বজনীন। গ্যাংটকের প্রধান সরণী, এম.জি.মার্গ হল প্রচুর দোকানের সমন্বয়ে গঠিত কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থল। এটি ভারতের প্রধান শহরগুলির মধ্যে গণ্য হলেও গ্যাংটকের নৈশজীবন স্পন্দনশীল নাও হতে পারে, তবে ডাউনটাউন রেস্তো বার-এর ন্যায় স্থান পরিদর্শনের মাধ্যমে ভ্রমণার্থীরা আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এছাড়া এখানে ক্যাসিনোও রয়েছে, যেমন রয়্যাল প্লাজা হোটেলে অবস্থিত ক্যাসিনো সিকিম।
গ্যাংটক-এর মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি সফর ভ্রমণ রয়েছে। এই সফরগুলি সাধারণত ছোট গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে ছোট ছোট দলে প্রায় অর্ধ দিবস ব্যাপী হয়।
গ্যাংটক, এই অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং থাকার জায়গা খোঁজার ব্যাপারে পর্যটকদের কাছে বেশ কিছু বিকল্প উপলব্ধ রয়েছে। বাজেট ভ্রমণার্থীরা কম টাকায় শালীনভাবে থাকার জায়গা হিসাবে মাত্র 1800/- টাকায় পেয়ে যাবেন, অন্যদিকে যারা একটু বেশি খরচ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্যও অনেক বিকল্প রয়েছে। হোটেল সাগরিকা ও হোটেল সাইকৃপা হল বাজেটের মধ্যে ভালো হোটেল, অন্যদিকে মেফেয়ার স্পা রিসর্ট আ্যন্ড ক্যাসিনো, সবচেয়ে বিলাসবহুল আস্বাদনের সাথে পর্যটকদের শোভনীয়ভাবে রাখে। যারা মাঝারি মানের থাকার জায়গার খোঁজ করছেন, তারা নেতাক হাউস ও হোটেল সোনম ডেলেক-এ গিয়ে দেখতে পারেন।
বিমান মাধ্যমে
শিলিগুড়িতে অবস্থিত বাগডোগরা বিমানবন্দর হল গ্যাংটকের নিকটবর্তী বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি গ্যাংটক থেকে 126 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং গাড়ির মাধ্যমে গেলে পৌঁছাতে প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। বিমানবন্দর থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত হেলিকপ্টার পরিষেবাও উপলব্ধ রয়েছে। এই পরিষেবা কেবলমাত্র দিনে একবার পরিচালিত হয় এবং মাত্র চারজন যাত্রীকে বহন করে। গ্যাংটকের দক্ষিণ-পূর্বে পাকইয়োং বিমানবন্দর নামে একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। বিমানবন্দরটি 2014 সালের ডিসেম্বর মাসে চালু হওয়া নির্ধারিত ছিল, তবে এতে বিলম্ব হয়েছে।
রেল মাধ্যমে
গ্যাংটকের নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন হল শিলিগুড়িতে অবস্থিত নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। স্টেশনটি, শহর থেকে প্রায় 120 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গাড়ির মাধ্যমে দু’ঘন্টার মধ্যে পৌঁছানো যেতে পারে।
সড়ক মাধ্যমে
31-A জাতীয় সড়ক এই শহরের প্রধান প্রবেশ কেন্দ্র যেটি শিলিগুড়ির সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। শিলিগুড়ি ও অন্যান্য প্রতিবেশী শহরগুলিতে পৌঁছানোর জন্য, শহরের অভ্যন্তরে ট্যাক্সিই হল পরিবহনের সবচেয়ে সাধারণ মাধ্যম।
গ্যাংটকের আবহাওয়া বর্ষা ও শীতের মরশুমে বেশ কঠোর হতে পারে। শরৎ ও বসন্তকাল হল গ্যাংটক পরিদর্শনের সেরা সময়। এই শহরে মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বসন্তকাল বিরাজ করে অন্যদিকে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শরৎকাল স্থিত হয়। এছাড়াও গ্রীষ্মকাল, গ্যাংটক দেখার জন্য একটি প্রশংসনীয় ভাল সময়। গ্রীষ্মকাল মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিরাজ করে।
সব সার্বজনীন এলাকায় ধূমপান, আবর্জনা ছড়ানো এবং থুথু ফেলা আইনত অনুমোদিত নয়।
দার্জিলিং-এ ভ্রমণার্থীদের অসদৃশ, প্রতিবেশী শহর সিকিমে বিদেশীদের জন্য অবাধ প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। তাদেরকে একটি সংরক্ষিত অঞ্চলের অনুমতিপত্র বা আর.এ.পি. নিয়ে যেতে হয়। এখানে প্রবেশ বিনামূল্যে এবং শুধুমাত্র একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং একটি ভারতীয় ভিসা প্রয়োজন।
সিকিমের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা সংরক্ষিত স্থান হিসাবে পরিগণিত হয় এবং এইসমস্ত স্থানে প্রবেশের জন্য বিদেশী ও ভারতীয়দের প্রবেশের জন্য একটি সুরক্ষিত অঞ্চলের অনুমতিপত্র বা পি.এ.পি. নিয়ে যেতে হয়। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়, বিশেষ করে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়, বিদেশীদের প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না।
* সর্বশেষ সংযোজন : July 09, 2015