ঋষিকেশ, উত্তরাখন্ড

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সমৃ্দ্ধ উত্তরাখন্ডের ঋষিকেশ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃ্দ্ধ গন্তব্যস্থল – ঋষিকেশ মন ও শরীরে এক টু ইন ওয়ান রেসিপির উপলব্ধ করায়। ঋষিকেশ শহরের কেন্দ্রের আরোও উত্তরে, গঙ্গা নদীর তীরে, পর্যটকদের জন্য শান্ত ও নির্মল ঋষিকেশ আচ্ছাদিত রয়েছে। লক্ষণ ঝূলার দক্ষিণে রয়েছে স্বর্গ আশ্রম। একটি চিত্র অনুপম স্থানে আশ্রমটি নির্মিত রয়েছে, যেখানে ঋষি ও ভক্তরা তাদের সিদ্ধিলাভের জন্য যোগসাধনায় চারধারে লিপ্ত থাকেন। মন্দিরটি রোজ সকাল ও সন্ধ্যায় আরতির ঘন্টাধ্বনির অনুষ্ঠানের নিনাদের সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। বাজারগুলি সওদাকারি ঋষি ও সন্ন্যাসীদের ঘর বলে মনে হয় এবং সুবিখ্যাত গঙ্গা আরতি যা একই সঙ্গে নাটকীয় ও ধর্মীয় অনুভূতি বহন করে।

লক্ষণ ঝূলার পশ্চিম দিকটি ব্যাকপ্যাকার্সদের জন্য এক অপেক্ষারত দুনিয়া। হিমালয়ের পদভ্রমণ যাত্রীরা তাদের ভ্রমণযাত্রা এখান থেকে শুরু করে। প্রাকৃতিক দৃ্শ্যকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত, রিভার র্যাতফটিং, কায়াকিং ও বাঞ্জি জাম্পিং – ঋষিকেশে বিদ্যমান এইসমস্ত উত্তেজনাপূর্ণ মঞ্চসজ্জার সঙ্গে, রোমাঞ্চকর উৎসাহীরা বছরের পর বছর ধরে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে, যা এটিকে “ভারতের রোমাঞ্চকর রাজধানী” নামটি প্রদান করেছে।

ঋষিকেশে দর্শনীয় স্থান

  • ত্রিবেণী ঘাট : ত্রিবেণী হল তিনটি পবিত্র নদী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল। হাজার হাজার উপাসকেরা এখানে জলের মধ্যে একটি ডুব দিতে রোজ সকালে এবং বিকালে ত্রিবেণী ঘাটে ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় করে। তারা বিশ্বাস করেন যে এতে তাদের পাপ ধুয়ে যাবে। ত্রিবেণী ঘাটে অনুষ্ঠিত প্রতি সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতির মহত্ত্ব এখানে দেখা যায়।
  • ভারত মন্দির : আদিগুরু শঙ্করাচার্য্যের দ্বারা নির্মিত এটি দ্বাদশ শতকের এক মন্দির। এই মন্দিরের মধ্যে রাখা বিষ্ণুর মূর্তিটি হল একটি একক কালো রঙের জীবাশ্ম পাথরের দ্বারা উৎকীর্ণ, যা শালগ্রাম নামে অভিহিত।
  • ঋষিকূন্ড : ‘ঋষিকূন্ড’ শব্দটির অনুবাদ হল ‘ঋষির পুষ্কর’। কথিত আছে যে, কুব্জ ঋষির অনুরোধে যমুনা নদীর জল এই পুকুরের মধ্যে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও এখানে একটি বিখ্যাত শনি মন্দিরও রয়েছে (মন্দিরটি গ্রহরাজ শনির প্রতি উৎসর্গীকৃত)।
  • লক্ষণ ঝূলা ও রাম ঝূলা : গঙ্গা নদী জুড়ে ব্যাপ্ত 450 ফুট দীর্ঘ সেতু দুটি হল শহরের ল্যান্ডমার্ক। একদিকে একটি সেতু যেমন তেহরি ও পৌরি জেলাকে যুক্ত করেছে, অন্যদিকে অন্যটি শিবানন্দ আশ্রম ও স্বর্গ আশ্রমকে সংযুক্ত করেছে। যদিও লক্ষণ ঝূলার রামায়ণের এক পৌরাণিক উপাখ্যনের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে, রাম ঝূলা দুটি বিখ্যাত আশ্রমের সংযোগের জন্য নির্মিত হয়েছিল।
  • গীতা ভবন : এক অন্যতম প্রাচীন মন্দির ভবন, গীতা মন্দির হল হিন্দু ধর্মগ্রন্থের পৌরাণিক সচেতনতায় নিবেদিত একটি মিউজিয়াম বা যাদুঘর। এটিতে 1000-টি কক্ষ আছে যেখানে ভক্তরা বিনামূল্যে থাকতে পারে।
  • নীলকন্ঠ মহাদেব : গঙ্গা জুড়ে পর্বতের চূড়ার উপরে অবস্থিত এটি এমন একটি প্রসিদ্ধ স্থান যেখানে প্রভু শিব বিষ পান করেছিলেন এবং নীলকন্ঠ (নীল কন্ঠ সমন্বিত ব্যাক্তিত্ব) হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
  • তেরা মনজিল মন্দির : হরিদ্বার বদ্রিনাথ মহাসড়ক থেকে দৃশ্যমান, এই মন্দরটি ঋষিকেশের অবশ্য পরিদর্শনীয় স্থান।
  • কৌড়িওয়ালা : সাদা জলে ভারতের রিভার র‍্যাফটিং রাজধানী হিসাবে বিখ্যাত।
  • লক্ষণ মন্দির : এমন একটি স্থান যেখানে রাম ও লক্ষণ ঋষি কুন্ডে তাঁদের পাপ ধুয়ে ফেলার পর লক্ষণ এখানে ধ্যান করেছিলেন। ঋষি কুন্ড এখানেই অবস্থিত।
  • বশিষ্ঠ গুফা : একসময়ের বিখ্যাত ঋষি বশিষ্ঠের গুহা, ঋষিকেশ থেকে 16 কিলোমিটার দূরে এই স্থানটি, বর্তমানে একটি প্রিয় ক্যাম্পিং (শিবির) স্থল।
  • কূঞ্জপূরী দেবী মন্দির : একটি ছোট্ট পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই মন্দিরটি হল বহু হিন্দু দেবদেবীর উৎসর্গীকৃত এক অন্যতম মন্দির, যা ভোরবেলা ও গোধূলি বেলায় এক উজ্জ্বল দীপ্তিশীল শোভা পরিদর্শনের প্রস্তাব দেয়।

ঋষিকেশের আশ্রমগুলি এক ধরনের খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানকর বহু আশ্রমগুলি কোনও কষ্টসহিষ্ণু বা শালীনতার অর্থ জ্ঞাপন করে না, এগুলি নিজেরাই এক একটি পর্যটন চুম্বকাকর্ষণ হয়ে উঠেছে। ঋষিকেশের এই প্রকারের বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ আশ্রমের তালিকা এখানে প্রদান করা হয়েছে।

ঋষিকেশে ক্যাম্পিং ও রিভার র‍্যাফটিং
বেশ কিছু আ্যডভেঞ্চার সংস্থা ঋষিকেশ-এ ক্যাম্পিং ট্যুর এবং রিভার র‍্যাফটিং অভিযান সংগঠিত করে। একদিকে সাদা জলের নদীপ্রপাত ও বিভিন্ন র্যা ফটার, যারা নদীপ্রপাতে ভালো সময় কাটানোর অনুভূতি নেন, অন্যদিকে একসঙ্গে সারিবদ্ধভাবে রাখা কোনও একটি র‍্যাফটের সম্মুখে লাফিয়ে পড়ার জন্যও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে, প্রথমে একজন বিশেষজ্ঞের থেকে র‍্যাফটিং সম্পর্কে কিছু অনুশীলন করে নেওয়াটা সবসময়ই একটি ভালো ধারণা। অনেক সফর সংস্থা রয়েছে যারা প্রমোদ-ভ্রমণের প্রস্তাব দেন, যাতে একটি একক প্যাকেজে ক্যাম্পিং ও রিভার র‍্যাফটিং-এর সংযুক্ত সুবিধা রয়েছে। কতগুলি রাত্রি অতিবাহিত করছেন এবং রিভার র‍্যাফটিং-এর কার্যভারের দূরত্বের উপর নির্ভর করে বিশেষভাবে উপযুক্ত প্যাকেজ উপলব্ধ আছে; যেগুলির মূল্য 1700/- টাকা থেকে শুরু করে, 5000/- টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

ঋষিকেশ সম্পর্কে তথ্যাবলী

  • ঋষিকেশ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1360 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।
  • এটি হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় শহরগুলি, যেমন – বদ্রীনাথ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রীর প্রবেশদ্বার।
  • ঋষিকেশে সাক্ষরতার হার হল 75 শতাংশ, যা দেশের গড় শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।
  • আপনি এখানে কোনও আমিষ খাবার খুঁজে পাবেন না। যদিও, এখানকার পরিবেশিত নিরামিষ খাবার খুবই মুখরোচক।

ঋষিকেশ কোথায় অবস্থিত?

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরাখন্ডের এক সুন্দর শহর হল ঋষিকেশ।

বিমান মাধ্যমে পৌঁছানোর উপায়
নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেরাদূনে অবস্থিত – যা জলি গ্র্যান্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দর থেকে ক্যাবের মাধ্যমে ঋষিকেশে পৌঁছাতে 21 মিনিট সময় লাগে। জলি গ্র্যান্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঋষিকেশের দূরত্ব হল মাত্র 21 কিলোমিটার।

দ্বিতীয় নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি হল নতুন দিল্লীতে – ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমানের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সাথে সু-সংযুক্ত রয়েছে।
রেল মাধ্যমে পৌঁছানোর উপায়
নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশনটি হল হরিদ্বার, যা ঋষিকেশ থেকে 25 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হরিদ্বার থেকে, একজন ভ্রমণার্থী একটি ক্যাবের মাধ্যমে আধ ঘন্টায় ঋষিকেশে পৌঁছে যেতে পারেন।

ঋষিকেশ পরিদর্শনের সেরা সময়

ঋষিকেশ পরিদর্শনের সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ শীতের মাসগুলিতে। রোমাঞ্চকর কার্যকলাপ যেমন র্যা ফটিং খোলা থাকে। এখানকার সংযুক্ত আকর্ষণ হিসাবে রয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক যোগা উৎসব। মার্চ থেকে জুন মাসও মনোরম, তবে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের বর্ষার মাসগুলি এড়িয়ে যাওয়াই বাঞ্চনীয়। এইসময় র্যামফটিং বন্ধ থাকে।

ঋষিকেশের উপর আরোও তথ্য

  • ঋষিকেশের স্থানাঙ্ক কি কি?
    ঋষিকেশের স্থানাঙ্ক হল 30.1030° N (উত্তর), 78.2940° E (পূর্ব)।
  • ঋষিকেশের পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলি কি কি?
    ঋষিকেশের মধ্যেই মন্দির ও দর্শনীয় স্থানের প্রাচুর্য্য রয়েছে। তবে, ঋষিকেশের পারিপার্শ্বিক স্থানগুলিও বেশ চিত্রানুগ এবং প্রচুর পর্যটকদেরও আকর্ষিত করে। মুসৌরি, নিউ তেহরি, দেবপ্রয়াগ, ধনৌলটি, কানাতাল, ছাম্বা, শিবপুরী, হরিদ্বার, নরেন্দ্র নগর, চিলা অভয়ারণ্য, রাজাজি জাতীয় উদ্যান ও ব্যাশি হল ঋষিকেশের চারপাশের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান যেগুলি যে কেউ পরিভ্রমণে যেতে পারেন।


* সর্বশেষ সংযোজন : August 20, 2015

Published On: Thursday, August 20th, 2015