কলকাতায় সায়েন্স সিটি 1996 সাল নাগাদ ধারণাতীত হয়েছিল এবং 1997 সালের মাঝামাঝি নাগাদ এটি সর্বসাধারণের জন্য সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত করা হয়। 1993 সালের প্রাক্কালে স্পিলবার্গের সুপার-হিট চলচ্চিত্র জুরাসিক পার্ক, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর পুনর্নবীকরণের এক আগ্রহদীপ্ত আলোড়ন তৈরি করেছিল। 1996 সালে কলকাতায় একটি বিজ্ঞান কেন্দ্র খোলার ধারণা পূর্ণ বিকশিত হয়েছিল। একটি প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ইষৎ ধারণা বশবর্তী হতে থাকে, যা সর্বসাধারনের মধ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংস্কৃতির অন্তর্দৃষ্টিকে অগ্রসর করে তুলবে, অবশেষে সায়েন্স সিটি খোলার কাজ চরিতার্থতা লাভ করে।
অনেক সমারোহের মধ্যে দিয়ে সায়েন্স সিটি উন্মুক্ত করা হয়েছিল, সায়েন্স সিটি পরিদর্শনকারী সকলকে নিক্কো পার্কের জন্য ছাড় টিকিট প্রদান করা হয়েছিল এবং ভ্রমণার্থীদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বাসের বন্দোবস্তও করা হয়েছিল।
সায়েন্স সিটি দুটি ভাগে বিভক্ত আছে – বিজ্ঞান কেন্দ্র এবং কনভেনশন্ (সম্মেলন) কেন্দ্র। সায়েন্স সেন্টার বা বিজ্ঞান কেন্দ্রে সমস্ত মজার ও শিক্ষামূলক প্রদর্শনী ও নিদর্শন রয়েছে। কনভেনশন্ কেন্দ্র বা সম্মেলন কেন্দ্রটি জমায়েতের জন্য বিপূল পরিমাণ পূর্ণ সুসজ্জিত জায়গার সমন্বয়ে গঠিত। এখানে 20,000-এরও বেশি আসনবিশিষ্ট একটি মহান থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চ রয়েছে, একটি মিনি অডিটোরিয়াম রয়েছে যেখানে প্রায় 400 জন ব্যাক্তি বসতে পারে এবং এগারোটি সভাগৃহ সহ একটি সেমিনার সভা গৃহ রয়েছে – যেগুলির ধারণ ক্ষমতা 15 থেকে 100 জন।
সায়েন্স সেন্টার (বিজ্ঞান কেন্দ্র)-টি আবার শৃঙ্খলাবদ্ধ বিভাগে বিভক্ত করা রয়েছে – স্পেস ওডিসি, ডায়নামোশেন, ইভোলিউশেন থিম পার্ক, মেরিটাইম সেন্টার ও সায়েন্স পার্ক। এই সমস্ত প্রতিটি বিভাগও আবার বিভিন্ন বিজ্ঞান চিত্র প্রদর্শনী, 3D প্রদর্শনী ও চলচ্চিত্র নাট্য অনুষ্ঠানস্থল। এই প্রদর্শনী ও নিদর্শনগুলি, বিদ্যালয়ের শিশুদের আগ্রহের মাত্রা এবং মনোযোগের বিস্তার লাভের কথা মাথা রেখেই নকশায়িত করা হয়েছে। তাই সাধারণত জাঁকজমকপূর্ণতা, যদি কোনওভাবে ভয়ানক বাতাবরণকে সাধারণভাবে সায়েন্স মিউজিয়ামে মধ্যে পরিব্যাপ্ত করা যায়, যা আনন্দের সাথে এই স্থান থেকে নিরুদ্দিষ্ট করা গেছে। এখানে দর্শকদের সবসময়ের জন্য প্রিয় কিছু আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে স্পেস থিয়েটার, প্ল্যানেটেরিয়াম (তারামন্ডল), 3D ভিশন থিয়েটার এবং টাইম মেশিন্।
স্পেস থিয়েটারে একটি চমৎকার চলচ্চিত্র আন্টার্কটিকা আলোড়ন সৃষ্টি করেঃ একটি ভিন্ন প্রকৃতির একটি দু:সাহসিক অভিযানের মাধ্যমে পৃথিবীর শীতলতম অঞ্চলে ভূমি ও সমুদ্র জীবন কি রকম দেখতে লাগে তার দৃ্শ্য দেখায়। এরপর এখানে রয়েছে 3D থিয়েটার – যা দর্শক অতিথিদের মধ্যে বিস্ময়কর রূপে সাফল্যের আলোড়ন সৃষ্টি করে। টাইম মেশিন, একটি কৃত্রিম গমন যাত্রা যা দর্শকদের গ্রহের মধ্যে দিয়ে চলার এক প্রতীকি ছাপ প্রদান করে, যা আরেকটি অত্যাশ্চর্য্য আকর্ষণ।
যেহেতু এই স্থানটিে পরিবার ও শিশুদের কথা মাথায় রেখেই নির্মিত, সেইজন্য এখানে একটি বিশাল পিকনিক স্থল রয়েছে; যেখানে আপনি বাড়ি থেকে খাবার এনে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। যেহেতু পার্কিং অঞ্চলটিতে একসঙ্গে 1000-টিরও বেশি গাড়ি রাখার বন্দোবস্ত রয়েছে, সেহেতু গাড়ি পার্কিং-এর এখানে কোনও সমস্যা নেই।
ঠিকানা :সায়েন্স সিটি, জে.বি.এস.হালডান এভিন্যিউ, কলকাতা – 700046.
দূরাভাষ (ফোন নং) : 033 – 22854343, 22851572, 22852607.
বিমান মাধ্যমে : নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখান থেকে একজন ভ্রমণার্থীর ক্যাবের মাধ্যমে ভায়া ভি.আই.পি. রোড ও ই.এম.বাইপাস হয়ে সায়েন্স সিটিতে পৌঁছাতে প্রায় আধ ঘন্টা সময় লাগে।
রেল মাধ্যমে : হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে একজন ভ্রমণার্থীর ভায়া 117-নং জাতীয় সড়ক হয়ে সায়েন্স সিটিতে পৌঁছাতে প্রায় আধ ঘন্টা সময় লাগে। এর মোট দূরত্ব হল 15.4 কিলোমিটার (প্রায় 9.6 মাইল)।
কলকাতা ও তার আশেপাশের দর্শনীয় আকর্ষণগুলি পরিদর্শনের সেরা সময় হল শীতকালের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে। মার্চ ও অক্টোবরের মাসগুলিত পরিভ্রমণের পরিকল্পনাও খুব একটা খারাপ হয় না। প্রখর গ্রীষ্মের সময়, প্রচন্ড তাপ ও আর্দ্রতার দরুণ, কলকাতা পরিভ্রমণ সাধরণভাবে এড়িয়ে চলাটাই বাঞ্চনীয়।
রবিবার ও বেসরকারী ছুটির দিনগুলি সহ, সায়েন্স সিটি সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল 9:00-টা. থেকে রাত 9:00-টা. পর্যন্ত খোলা থাকে। সায়েন্স সিটি হোলির দিন বন্ধ থাকে।
টিকিটের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তিবিশেষের জন্য বিভিন্ন প্রকারের হয়। 20 বা তার বেশী জনের একটি সাংগঠনিক সমষ্টিকে, একজন ব্যাক্তির চেয়ে কম মূল্য দিতে হয়, বিদ্যালয় সমষ্টিকে আবার সাংগঠনিক সমষ্টির চেয়েও কম মূল্য দিতে হয় এবং সমিতির অধীনস্থ কোনও বিশেষাধিকার বিভাগকে 5/- টাকার একটি খুবই কম মূল্য প্রদান করতে হয়।
একজন ব্যাক্তির প্রবেশ মূল্য হল মাথা পিছু 40/- টাকা, অন্যদিকে সায়েন্স সিটির অভ্যন্তরীণ আকর্ষণগুলির টিকিট আলাদাভাবে কেনা প্রয়োজন। গড় হিসাবে, একজন ব্যাক্তি যিনি যেকোনও রাইড ও প্রদর্শনীগুলি উপভোগ করলে আশা করা যায়, আপনার প্রবেশমূল্য সহ মোটামুটি 250/- টাকা থেকে 300/- টাকার মধ্যে খরচ হতে পারে।
সায়েন্স সিটির স্থানাঙ্ক কি কি?
22.54 ডিগ্রী N, 88.39 ডিগ্রী E।
সায়েন্স সিটির নিকটবর্তী আকর্ষণগুলি কি কি?
নিক্কো পার্ক, বিড়লা মন্দির, ক্রাইস্ট কিং-এর গীর্জা, বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়্যাল আ্যন্ড টেকনোলোজিক্যাল মিউজিয়াম, ব্যাসিলিকা ব্যান্ডেল মঠ, পার্ক শো হাউস সিনেমা।
* সর্বশেষ সংযোজন : December 17, 2015