স্বর্ণ মন্দির, অমৃতসর

শ্রী হরমন্দির সাহেব (যার অর্থ ঈশ্বরের মন্দির) নামেও অভিহিত স্বর্ণ মন্দির বা গোল্ডেন টেম্পল হল একটি শিখ গুরুদুয়ারা (প্রার্থনা ও পূজার্চনার স্থান), এটি শিখদের পঞ্চম গুরু, গুরু অর্জন দেব দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরটি 1588 থেকে 1604 খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে স্থাপিত হয়েছিল, এটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, গুরু গ্রন্থ সাহেব-এর স্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছিল।

অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আফগান আক্রমণের পর মন্দিরের কিছু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যা 1764 সালে পুর্নস্থাপিত হয়। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে, মহারাজা রঞ্জিত সিং স্বর্ণের দ্বারা মন্দিরটিকে সজ্জিত এবং আবৃত করেছিলেন, যার থেকে মন্দিরটি “স্বর্ণ মন্দির” ডাক নামে পরিচিত।

স্বর্ণ মন্দির, সরোবর নামক একটি হ্রদ দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছে, যা পবিত্রময় জলধারা অমৃত সমন্বিত (অমর দেবসুধা হিসাবেও উল্লিখিত)। সরোবরটিতে একটি দুঃখ ভঞ্জনি বেড়ি নামে অলৌকিক স্থান রয়েছে। পট্টি শহরের এক ধনী জমিদার দূনি চাঁদ খত্রী এই কিংবদন্তী বেড়ীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন, এঁনার পাঁচটি কন্যা ছিল। একদিন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাদেরকে খাবার কে দেয়। তাদের মধ্যে বড় চার কন্যা উত্তর দিল, তাদের পিতাই তাদের অনুগ্রহকারী বা পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের খাবার তিনিই দেন। কিন্তু রজনী নামের কনিষ্ঠতম কন্যাটি বলল ঈশ্বরই সমস্ত জীবকে বাঁচিয়ে রাখেন। দূনী চাঁদ এই কথা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে, সেই কন্যাকে একজন কুষ্ঠরোগীর সঙ্গে বিবাহ দেন। তিনি তাঁর স্বামীকে ভালোবাসতেন এবং তার যত্নও করতেন। সেই সময় গুরু রাম দাস জী অমৃতসরে একটি নতুন শহর নির্মাণ করছিলেন। রজনী তাঁর স্বামীকে অমৃতসরে নিয়ে আসেন। তিনি গুরুর ভক্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাঁরা রজনীর অবস্থার প্রতি করুণা করে থাকার জন্য একটি কক্ষ প্রদান করেন। তাঁকে সর্বসাধারণ রান্নাঘরের মধ্যে খাবার রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি যখন তার কর্মে যোগ দিতে আসতেন তখন সঙ্গে করে তাঁর স্বামীকে নিয়ে আসতেন। স্বামীকে একটি গাছের ছায়ার নীচে বসিয়ে রান্নাঘরে ঢুকতেন। একদিন সে তার স্বামীকে একটি বেড় গাছের নীচে ছেড়ে যান। তাঁর স্বামী, লক্ষ্য করেন যে সেখানকর কিছু কাক পুকুরের জলে ডুব দিচ্ছে এবং তারা কালো থেকে সাদায় রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। তিনি তখন বুঝতে পারলেন যে এটি কোনও সাধারণ জল নয়। তিনি পুকুরটির সামনে গেলেন এবং জলের মধ্যে ডুব দিলেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন এবং তিনি আর কুষ্ঠরোগী রইলেন না। তিনি পুনরায় সেই গাছের তলায় এসে বসে রইলেন। রজনী তাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। সেই যুবক তাঁকে বিশ্বস্ত করালেন এবং এই দম্পতি পুকুরটি সম্পর্কে গুরু রাম দাস জীকে বলে গেলেন। এটি শ্রবণের পর গুরু রাম দাস জী এই কথা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বাবা বুদ্ধ জী-কে বলেন। তিনি বলেন যে এই পুকুরটি এমন একটি স্থান যেটি গুরু অমর দাস জী-র পূর্ব প্রতীক্ষায় ছিল। বৃক্ষটি কষ্ট এবং যন্ত্রণার উপশম হিসাবে, এটি দুঃখ ভঞ্জনি বেড়ী হিসাবে পরিচিত ছিল।

মন্দিরটির সরলতার প্রতীকস্বরূপ, মন্দিরটিতে চারটি প্রবেশপথ আছে; যা জীবনের সমস্ত দিক ও পথ থেকে আসা মানুষকে স্বাগত জানায়। গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণ মন্দিরটি শিখদের জন্য একটি পবিত্র স্থান ও উপাসনার একটি জায়গা।

স্বর্ণ মন্দির মানচিত্র

স্বর্ণ মন্দির ভি.ডি.ও

স্বর্ণ মন্দির সম্পর্কে তথ্যাবলী

  • স্বর্ণ মন্দির ষোড়শ শতকে নির্মিত হয়েছিল (1588 খ্রীষ্টাব্দ থেকে 1604 খ্রীষ্টাব্দ)।
  • এটি প্রতিদিন প্রায় 100,000 জন ব্যাক্তি দ্বারা পরিদর্শিত হয়।
  • স্বর্ণ মন্দিরের চূড়াটি শুদ্ধ সোনা দ্বারা নির্মিত।
  • মন্দিরটির যৌথ রন্ধনশালায় প্রায় 75,000 জন উপাসক প্রতিদিন লঙ্গর (খাবার) গ্রহণ করে।

স্বর্ণ মন্দিরের অবস্থান

স্বর্ণ মন্দিরটি ভারতের পাঞ্জবের অমৃতসর শহরে অবস্থিত। অমৃতসর উত্তর-পশ্চিম ভারতে অবস্থিত এবং এটি শিখ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এক উন্নত পরিবহন সংযোগ-ব্যবস্থার মাধ্যমে অমৃতসর, ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সু-সংযুক্ত রয়েছে। শ্রীগুরু রাম দাসজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি অমৃতসর শহর থেকে প্রায় 11 কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এছাড়াও আপনি রেল ও বাসের মাধ্যমেও এই পবিত্র শহরটিতে পৌঁছাতে পারেন। এই বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন ও বাস স্ট্যান্ড থেকে স্বর্ণ মন্দিরে পৌঁছাতে আপনি ট্যাক্সি, অটো ও রিকশা পেয়ে যাবেন।

স্বর্ণ মন্দির পরিদর্শনের সেরা সময়

আবহাওয়া-জলবায়ুর কথা মাথায় রেখে শীত, বসন্ত ও শরৎকাল হল স্বর্ণ মন্দির পরিদর্শনের সেরা সময়। এই মরশুম অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত বিরাজ করে। এছাড়াও এই মন্দির পরিদর্শনের ভালো সময় হল ছুটি ও উৎসবের সময়। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ হল বৈশাখী উৎসব এবং অন্যান্য ছুটির মধ্যে রয়েছে গুরু তেগ বাহাদূর জী-র শহীদ দিবস এবং গুরু নানক দেব জী-র জন্মদিবস। আলোর উৎসব দীপাবলীর সময়, মন্দিরটি প্রদীপ, আলো ও বাজিতে সু-সজ্জিত হয়ে ওঠে। মন্দিরের জনপ্রিয়তা সারাবছর ধরে এটিকে জণাকীর্ণ করে রাখে।

স্বর্ণ মন্দিরের নিকটবর্তী আকর্ষণ

জালিয়ানওয়ালা বাগ, দূর্গিয়ানা মন্দির, মহারাজা রঞ্জিত সিং-এর মূর্তি, অকাল তখত্, বাবা অটল, গুরুদুয়ারা লোহগড় অমৃতসর, রামসার সাহেব, গুরুদুয়ারা ডেরা বাবা নানক, গুরুদুয়ারা তরণ তারণ, গুরুদুয়ারা খাদুর সাহেব, রাম তীর্থ মন্দির, মন্দির মাতা লাল দেবী এবং ওয়াগাহ্ সীমান্ত।

* সর্বশেষ সংযোজন : December 09, 2015

Published On: Wednesday, December 9th, 2015