কলকাতা (পূর্বে ক্যালকাটা নামে পরিচিত) 1772 খ্রীষ্টাব্দ থেকে 1911 খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারতের রাজধানী ছিল। এই ধরণের স্হাপত্য, আধুনিক ব্রিটিশের এক দীর্ঘায়িত উদ্ঘাটন স্বাভাবিকভাবেই এযাবৎ অদেখা, কলকাতায় এক নতুন বু্ধিমত্তা ও সাংস্কৃতিক জাগরণ নিয়ে এসেছিল। এটি আশ্চর্যজনক নয় যে, সেইসময় প্রয়াত রাণী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে কলকাতায় নির্বাচিত, এক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল। একটি স্বল্প পরিচিত সত্যতা হল যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কোনও তহবিল গ্রহণ করেনি। সাদা মার্বেলের অট্টালিকা ও তার পরিবেষ্টিত 65-একর বাগিচা নির্মাণ করতে এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকার এক হতবম্ভিত মূল্য প্রয়োজন হয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতির হিসাবনিকাশে এই মূল্য আজকের দিনে মোটামুটি প্রায় 2 কোটি 20 লক্ষ 48 হাজার ডলারের সমান। এটি সম্পূর্ণরূপে ব্রিটিশ মালিকানাধীনে ভারতীয় রাজ্য ও ব্যাক্তিবিশেষের দ্বারা নিহিত ছিল যারা কলকাতায় ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে নিজেদের অনুগ্রহ ভাজন করতে চেয়েছিলেন।
শোভামন্ডিত শ্বেত শ্রদ্ধার্ঘে ব্রিটিশ বাস্তবায়নের সম্পূর্ণতায় মুঘল স্থাপত্যের তারতম্য একত্রিত রয়েছে। স্যার উইলিয়াম এমারসন মূখ্য স্থাপত্যবিদ ছিলেন যিনি তার অবিচ্ছেদ্যতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ধারণা তৈরি করেছিলেন। কার্যোদ্ধারের সক্রিয়তা, কলকাতার মেসার্স মার্টিন আ্যন্ড কোং-র উপর ন্যস্ত ছিল। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ থেকে সর্বসাধারণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সামগ্রিকভাবে নির্মাণে 15 বছর সময় লেগেছিল।
ভারতের স্থাপত্য বিস্ময়ের তালিকায়, মহিমার দিক দিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল শুধুমাত্র তাজমহলের পরেই গণ্য হয়। তবে, স্থাপত্য শৈলীর একত্রীকরণের ভাষায় বলতে গেলে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্ভবত মহান তাজকেও ছাড়িয়ে যায়। মেমোরিয়ালের নকশা মুঘল, ভেনিসিয়, মিশরীয়, ডেকানি এবং ইসলামী শৈলী থেকে গৃহীত হয়েছে, তাদের সকলকে এক চতুরতার সঙ্গে একত্রিকরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র তৎকালীন ব্রিটিশ আধুনিক স্থপতির নির্মাণে সক্ষম হয়েছিল।
মকরানা মার্বেলে নির্মিত, বিস্তৃত মঞ্চ থেকে শুরু করে গম্বুজের উপর লন্ঠন পর্যন্ত পরিমাপ হল 184 ফুট। এঞ্জেল অফ ভিক্টরি থেকে লন্ঠনের চূড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হল আরোও 16 ফুট। আশ্চর্যের কিছু নয় যে, স্মৃতিস্তম্ভটির উচ্চতা একজন পরিদর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে প্রথম ছাপ তৈরি করেছিল।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গ্যালারী কলকাতার ঔপনিবেশিক অতীতের একটি মানানসই সম্মান জ্ঞাপণ করে। তারা কালানুক্রমিকভাবে রাণীর জীবনের তৈলচিত্রে বর্ণিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলিকে পেশ করে। সেখানে রাণীর রাজ্যাভিষেক, রাজকুমার আলবার্টের সঙ্গে তাঁর বিবাহ, তাঁর পুত্র এডওয়ার্ড VII-এর বিবাহ ও আরোও অন্যান্য চিত্রও রয়েছে। রাণীর পিয়ানো এবং লেখার ডেস্কটিও এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্র, জয়পুরে, ওয়েলসের রাজকুমারের প্রবেশের তৈল চিত্রটি পেশ করা হয়েছে।
যদি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এর এই সমস্ত কিছু ভারতের সাম্রাজ্যবাদী অতীতের একটি নতজানু অভিবাদনের রোল তোলে, তাহলে আপনি এক ক্ষতিপূরক বৈশিষ্ট্য রূপে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিকৃতির সঙ্গে জাতীয় নেতাদের প্রদর্শনশালা দেখতে পারেন। সমসাময়িক নাট্যকার এবং আক্ষরিক লোকেদের ব্যবহারের অমূল্য পান্ডুলিপির সুবিশাল সংকলন রয়েছে; যেমন টিপু সুলতানের পত্র, হাফিজের গজল্, আকবর নামাহ, শাহ নামাহ, উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের দ্বারা সঙ্কলিত নাটক আরাবিয়ান নাইটস এবং রুবাইয়াত।
যেহেতু এটি সাধারণভাবে এক ভালো সময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সময় কাটাতে এক নিঁখুত মুক্ত আঙ্গনের প্রস্তাব দেয়, সেহেতু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তরুণ প্রেমীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। রীতি অনুযায়ী ভারতীয় সংস্কৃতি হল সংরক্ষণশীল এবং অবিবাহিত জুড়িদের মধ্যে সার্বজনীনভাবে স্নেহিত প্রীতিসাক্ষাতের প্রদর্শন অসমর্থন জানায়। এর ফলস্বরূপ, ভিক্টোরিয়া গার্ডেনের ন্যায় স্থানগুলি অনুরাগভিলাষী যুগলদের মধ্যে জনপ্রিয় রূপে পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে।
সন্ধ্যা নামার সময়, সাদা মার্বেলের ভবনটি গোধূলি আলোয় স্নানিত দ্যূতিময় দেখায়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এ একটি আলোক ও ধ্বনি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়; যাতে কলকাতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়, যা আজও পর্যন্ত সমস্ত বাঙালির মধ্যে মহান গর্বের বিষয় হয়ে রয়েছে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জওহরলাল নেহরু রোডের পরে, হগলী নদীর তীরের নিকটে স্থানীয়ভাবে অভিহিত ময়দানের উপর স্থিত রয়েছে।
ঠিকানা: 1, ক্যূইন্স ওয়ে, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ – 700071.
বিমান মাধ্যমে: নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি হল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ভায়া ভি.আই.পি. রোড, বিমানবন্দর থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পৌঁছাতে আপনার প্রায় 30 মিনিট সময় লাগবে।
রেল মাধ্যমে: নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন হল হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন। রেলওয়ে স্টেশন থেকে গাড়ির মাধ্যমে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পৌঁছাতে আপনার প্রায় 15 মিনিট সময় লাগবে।
মেট্রো রেলের মাধ্যমে: নিকটবর্তী মেট্রো রেলওয়ে স্টেশন হল ময়দান, যেখান থেকে আপনি কোনও ট্যাক্সি বা স্থানীয় বাসের মাধ্যমে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পৌঁছাতে পারেন।
বাস/গাড়ির মাধ্যমে: করুণাময়ী স্টপেজ থেকে এক্সাইড স্টপেজ পর্যন্ত একটি মারুতী ওমনি ভাড়া নিন। সেখানে থেকে প্রচুর স্থানীয় বাস রয়েছে যেগুলি আপনাকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পৌঁছে দেবে।
শীতকালে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসগুলি সবসময়ই কলকাতা পরিভ্রমণের সেরা সময়। তবে, আপনি যদি কলকাতার বিখ্যাত দূর্গা পূজা উৎসব দেখতে চান, তাহলে একটু আগেও আসতে পারেন। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেহেতু এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে, তাই এই মাসগুলিকে এড়িয়ে যাওয়াই বাঞ্চনীয়। এছাড়াও জুলাই ও আগস্টের সময় মুষলধারায় বৃষ্টি, আপনার এই শহর পরিদর্শনের আনন্দ উপলব্ধির পরিকল্পনাকে বিরূপ করে তুলতে পারে।
বাগান ও ভবনটিতে প্রবেশের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে টিকিট বিক্রীত হয়।
মাসিক ও বার্ষিক টিকিট অল্পবয়সী তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়, যারা কেবল একান্তভাবে এই বাগানে কিছু সময় ব্যয় করতে পারে।
ভবনের প্রবেশমূল্য: ভারতীয় দেশবাসীর জন্য মাথা পিছু 10/- টাকা।
বিদেশীদের জন্য মাথা পিছু 150/- টাকা (মোটামোটি 3 ইউ.এস.ডি)।
মিউজিয়ামটি সোমবার ব্যতীত, সপ্তাহের প্রতিদিনই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সময়সীমা হল সকাল 10:00-টা. থেকে সন্ধ্যা 5:00-টা. পর্যন্ত। এছাড়াও ভবনটি বিশেষ বিশেষ ছুটির দিনগুলিতেও বন্ধ থাকেঃ প্রজাতন্ত্র দিবস (26-শে জানুয়ারী), হোলি, স্বাধীনতা দিবস (15-ই আগস্ট), ঈদ-ঊল-ফিতর, গান্ধী জয়ন্তী (2-রা অক্টোবর), দশেরা, ঈদ-ঊল-জোহা, খ্রীষ্টমাস (25-শে ডিসেম্বর)।
আলোক ও ধ্বনি প্রদর্শনী টিকিট আলাদা আলাদা ভাবে বিক্রীত হয়। প্রদর্শনীর শিরোণাম, “প্রাইড আ্যন্ড গ্লোরি – দ্য স্টোরি অফ ক্যালকাটা (“গৌরব ও মহিমা – কলকাতার কাহিনী”)”। প্রদর্শনীটি বাংলা ও ইংরাজী এই দুটি ভাষাতেই আয়োজিত হয়। টিকিটের হার হল 10/- টাকা এবং 20/- টাকা। প্রদর্শনী উপস্থাপনার সময় গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে ভিন্ন হয়। তবে, বাংলা ও ইংরাজী, উভয় প্রদর্শনীগুলি প্রতি মাসে সন্ধ্যা 6:00-টা. এবং রাত 8:30-টা.-র মধ্যে আয়োজিত হয়।
* সর্বশেষ সংযোজন : December 18, 2015