মাসাই মারা জাতীয় সংরক্ষণ, স্বতস্ফূর্তভাবে বন্যপ্রাণীর নিছক প্রজাতির জন্য পৃথিবীতে একটি স্বর্গোদ্যান হিসেবে উল্লেখিত রয়েছে। মাসাই (কেনিয়ার আধা-যাযাবর আদিবাসী) নামক ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানীয় অধিবাসীদের নাম অনুসারে নামাঙ্কিত এই উদ্যানটি হল কেনিয়ার সবচেয়ে এক অন্যতম বিশিষ্ট পর্যটন গন্তব্যস্থল। মাসাই মারা এক সুবিশাল বনভূমি, তৃণভূমি ও পাহাড় দ্বারা বিস্তৃত, যা এক সমৃদ্ধ প্রাণীজগতের দ্বারা অধ্যূষিত। বিভিন্ন ধরনের পাখি, স্তন্যপায়ী জীব ও সরীসৃপরা এখানে বসবাস করে। এখানে বিভিন্ন প্রকারের জীবজন্তু দেখতে পাওয়া যায়; যেমন মহিষ, গণ্ডার, চিতাবাঘ, হাতি, সিংহ, জলহস্তি, জিরাফ ইত্যাদি। গন্ডার ও হাতিদের এই গুল্মজাতীয় তৃণভূমিতে প্রায়ই দেখা যায়, অন্যদিকে হ্রদ ও নদীগুলিতে জলহস্তী ও কুমীর হল অতি-সাধারণ দৃষ্টিগোচর প্রাণী।
মাসাই মারা-র, পশ্চিমদিকে এক অত্যাশ্চর্য মালভূমি, পূর্বদিকে গুল্মজাতীয় ঝোপ-ঝাড় ও বালুকাময় মৃত্তিকা, উন্মুক্ত এবং মৃদু ঢালু তৃণভূমি এবং মারা নদীর উভয় তীরে বনভূমি সহ এক চমৎকার ভূ-প্রকৃতি আছে, যা প্রকৃতপক্ষে, মাসাই মারা অঞ্চলের মেরুদন্ড রূপেও বিরাজ করছে। এই মারা নদী বিপূল সংখ্যক জলহস্তী ও কুমীরদের আশ্রয় প্রদান করে। এই নদীটি পশ্চিমাভিমুখ হয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে, তানজানিয়া পার্কের মধ্যে দিয়ে লেক ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। নদী দ্বারা বেষ্টিত ঘন অরণ্যটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের দ্বারা অধ্যূষিত। মাসাই মারা পরিদর্শন আপনাকে নির্মল অনুভূতি প্রদান করবে। বন্যপ্রাণীদের এই সংরক্ষণটি তার নির্মল প্রশান্তির জন্য সুপরিচিত।
বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় পাখি, চমৎকার ভূ-প্রকৃতি, ঘন পর্ণরাজি এবং বন, সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দা হল মাসাই মারা অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ। কেনিয়ার এই বিখ্যাত গন্তব্যস্থলটি প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গোদ্যান। এই অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিংহ, মহিষ, চিতাবাঘ, গন্ডার ও হাতিদেরকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। ক্রীড়া চালক বা সাফারিরা হলেন পর্যটকদের কাছে প্রিয়। অভিজ্ঞ গাইডের সঙ্গে সাফারি রাইড, সংরক্ষিত উদ্যানের অনেক রিসর্ট দ্বারা সংগঠিত হয় এবং তা সকাল, দুপুর এবং বিকেলবেলায় উপভোগ করতে পারেন। স্থানীয়দের রীতিনীতি, জীবনশৈলী ও প্রথাগত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী জনসাধারণ মাসাই গ্রাম পরিদর্শনে যেতে পারেন। মহীয়ান পরিযাণ হল পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ।
কেনিয়ার মাসাই মারা জাতীয় সংরক্ষণ হল প্রচুর অত্যাশ্চর্য স্থান ও কলরবের সঙ্গে এক জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। এই জাতীয় সংরক্ষিত এলাকাটিতে প্রচুর লজ্ রয়েছে; যেমন মারা সেরেনা, মারা সোপা এবং কিকোরোক বা ক্যাম্প বা শিবিরে অবস্থিত ইন্ট্রিপিডস ক্লাব, মারা সরোবা, মারা বাফ্যালো এবং কিছওয়া টেম্বো। তালেক নদীর নিকটবর্তী শিবির সন্নিকট হল থাকার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ স্থান। এই সমৃদ্ধ প্রাণী জগৎ, যে কোনও প্রকৃতি-প্রেমীদের জন্য অতি-আবশ্যিক পরিদর্শনীয় স্থান।
কেনিয়ার সবচেয়ে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ-স্বতস্ফূর্ত পর্যটন গন্তব্যস্থল মাসাই মারা, সেরেঙ্গেটি ইকোসিস্টেম (বাস্তুতন্ত্র)-এর মধ্যে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। মাসাই মারা-র পূর্বীয় সীমান্ত নাইরোবি থেকে প্রায় 167.7 মাইল দূরে অবস্থিত। বিমান মাধ্যমে আগত ভ্রমণার্থীদের জন্য নাইরোবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল সবচেয়ে বিশিষ্ট ও নিকটবর্তী বিমানবন্দর। নাইরোবি থেকে বিমান মাধ্যমে মাসাই মারা পৌঁছাতে প্রায় 40-45 মিনিট সময় লাগে। এছাড়াও এখানে কয়েকটি ছোট বিমানবন্দরও রয়েছে; যেমন সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে অবস্থিত মারা সেরেনা বিমানবন্দর এবং কিকোরোক বিমানবন্দর, যা নাইরোবি ও অন্যান্য নিকটবর্তী শহরগুলি থেকে আগত বিমানগুলিকে অভ্যর্থনা জানায়। সড়ক মাধ্যমে নাইরোবি থেকে এখানে পৌঁছাতে প্রায় পাঁচ-ছয় ঘন্টা সময় লাগে। উদ্যানটির চারপাশে ঘোরাফেরার জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিকল্প হল সাফারি যানবাহন এবং হট্ এয়্যার বেলুন। এগুলি সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে সহজেই উপলব্ধ হয়।
জুলাই থেকে অক্টোবর এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস যেহেতু এখানে শুষ্ক থাকে, তাই এই মাসগুলিই হল মাসাই মারা জাতীয় সংরক্ষণ পরিদর্শনের সেরা সময়। প্রতি বছর জুলাই ও আগস্ট মাসে পরিযায়ী পাখিরা আসে। সুতরাং, আপনি যদি একজন পক্ষী প্রেমী হন, আপনার পরিদর্শনের জন্য এটিই সেরা সময় হবে।
অনুসৃত এক অন্যতম নিয়ম ও প্রবিধান হিসাবে, ভ্রমণার্থীদের সকাল 6:00-টা. থেকে সন্ধ্যা 7:00-টা. পর্যন্ত রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণার্থীদের তাদের গাড়ির বাইরে আসার অনুমতি দেওয়া হয় না।
অ-পূর্ব আফ্রিকান (নন-ইষ্ট আফ্রিকান) ভ্রমণার্থীদের ক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য ধার্য মূল্য প্রযোজ্য রয়েছে (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য $80 এবং শিশুদের জন্য $30)।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলি হল : মারা নদী, মারা ত্রিভূজ (মারা ট্রাইআ্যঙ্গেল), ও.আই কিন্যেই সংরক্ষণ, মারা নাবৈশো সংরক্ষণ এবং মূশিয়ারা জলাভূমি।
* সর্বশেষ সংযোজন : December 11, 2015