টিম্বাকটু, মালি, আফ্রিকা

মালির টিম্বাকটুর স্ট্রীট বা সরণীসমূহ

টিম্বাকটু হল পশ্চিম আফ্রিকার মালির উত্তরীয় অংশে অবস্থিত একটি বিস্ময়কর শহর। ফরাসি ভাষায় এটি টোম্বৌকটু নামে অভিহিত। শহরটি তার নিজের নামের মাধ্যমেই এই স্থানটি সম্পর্কে আরো কৌতূহল সৃষ্টি করে। টিম্বাকটু শব্দটি একটি দূরবর্তী স্থান নির্দেশ করতে ব্যবহার করা হয়। টিম্বাকটু স্বতস্ফূর্তভাবে রহস্য নগরী বা নিলীন শহর নামে অভিহিত। টিম্বাকটুর ইতিহাস হল পঞ্চম শতকের প্রাচীন। এটি হেজিরা-র সময় ইমাকচারেণ তুয়ারেগের একটি গোষ্ঠী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে কথিত আছে। এই গোষ্ঠীটি বুকটু নামে একজন বৃদ্ধার নেতৃত্বে চালিত ছিল। সুতরাং টিম-বুকটু নামটির অর্থ বোঝায় বুকটুর স্থান। পরবর্তীকালে, জিনগ্যারেবার ও শানকোরের দু’টি মসজিদের স্থাপণের সঙ্গে শহরটি ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত হয়।

অরফিক আফ্রিকান শহরটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি ধারণা করা হয় যে, দ্বাদশ শতকের সময়কালে তুয়ারেগ যাযাবররা এই শহরটির প্রতিষ্ঠা করেন, পরবর্তীকালে যেটি লবণ ও পরিবহন-সাহারার স্বর্ণ বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছিল। কেউ কোওদিন কল্পনাই করতে পারে নি যে, এই কালোচিত উপনিবেশটি একদিন এক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে বেড়ে উঠবে।

অন্ধকার যুগের সময়, যখন ইউরোপের একটি প্রধান অংশ পুষ্টিসাধনের জন্য সংগ্রাম করছিল, টিম্বাকটুর সম্রাট হতবু্দ্ধিকর মসজিদের নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিমাণে অপব্যয় করেন। তাঁর রাজত্বকালে এমনকি ক্রীতদাসরাও সোনার সঙ্গে সুসজ্জিত হয়ে উঠেছিল।

টিম্বাকটুতে অনেক কবি, সঙ্গীত লেখক, লেখকদের জন্য এক প্রিয় ইঙ্গিত রয়েছে। বিখ্যাত কবি আলফ্রেড লর্ড টেন্যীসন তাঁর টিম্বুকটু নামক কাব্যিক গঠনে, শহরটিকে “রহস্যময়” এবং “দুর্বোধ্য” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। এই সুদূর নির্জন শহরটি সর্বদাই তার রহস্যময় চারুতা এবং ঐশ্বর্য্যের দ্বারা জনসাধারণকে আকৃষ্ট করে আসছে।

টিম্বাকটুর সবচেয়ে এক অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ – শানকোরে-র বিশ্ববিদ্যালয়, এটি এক ইসলামিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। এগুলি ছাড়াও, টিম্বাকটু শহরটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তথা শিক্ষার এক কেন্দ্রও হয়ে উঠেছিল। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের সময়কালে, বিভিন্ন মাদ্রাসার নির্মাণ সহ, 180-টি কোরাণিক বিদ্যালয় এবং কোরাণিক শানকোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণায় বশবর্তী হয়ে, এক বুদ্ধিজীবী এবং আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে আবির্ভূত হয়।

সাম্প্রতিককালে আফ্রিকার টিম্বাকটু সবচেয়ে এক অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থল হিসাবে কথিত রয়েছে, এই কৃতিত্ব সম্পূর্ণরূপে ইউনেস্কোর প্রতি যায়। অর্থাৎ, আপনি যদি আফ্রিকা জুড়ে একটি সফর-ভ্রমণ করেন, তবে টিম্বাকটুর এই চিত্রানুগ শহরটি পরিদর্শনের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।

তবে, টিম্বাকটুতে বিরাজমান প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে, সাম্প্রতিককালে শহরটি প্রবেশ করা একটি উচ্চ-ঝুঁকির কাজ হবে।201 2 সালের জুলাই থেকে ইসলামীয় রাষ্ট্র-বিদ্রোহীদের আধিপত্যের দরুণ, বর্তমানে টিম্বাকটু পরিদর্শনে আসার কথা বিবেচনা করতে বারণ করা হয়েছে। বর্তমানে এটি ভ্রমণের জন্য এক অনিরাপদ বা বিপদের সম্ভাবনাময় স্থান হয়ে উঠেছে। আমরা টিম্বাকটু সম্পর্কে সাম্প্রতিকতম তথ্য পেলেই আপনাদেরকে অবহিত করা হবে।

টিম্বাকটুর নিকটবর্তী বেশ কিছু আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে সিডি ইয়াহইয়া, শানকোরে এবং জিনগ্যারেবার মসজিদ, সু-পরিচর্যিত বাগিচা, ওয়াটার টাওয়ার (জল স্তম্ভ) এবং একটি মিউজিয়াম।

টিম্বাকটু সম্পর্কে তথ্যাবলী

  • 1988 সালে, এটিকে ইউনেস্কো (ইউ.এন.ই.এস.সি.ও) দ্বারা এক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্য্যাদা দেওয়া হয়।
  • 2012 সালে, টিম্বাকটুর সশস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রটি ইউনেস্কো দ্বারা এক বিপজ্জনক বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ইন ডেঞ্জার) রূপে তালিকাভুক্ত হওয়ার সমর্থন লাভ করে।
  • ইসলামীয় জঙ্গী গোষ্ঠী আনসার ডাইন, 2012 সালের, মে মাসে এই শহরটির একটি পবিত্র আধারকে বিধ্বস্ত করে দেয়।
  • টিম্বাকটুর অধিবাসীরা ফরাসি, বাম্বারা এবং বিভিন্ন আফ্রিকান ভাষায় কথা বলে। তবে, তাদের প্রকৃত ভাষা হল সোঙ্ঘাই।

টিম্বাকটু মালি মানচিত্র

টিম্বাকটু কোথায় অবস্থিত?

টিম্বাকটু, বর্ষার মরশুমে নাইজার নদীর শেষ প্রান্তে অবস্থিত এবং বর্ষার মরশুম ব্যতীত বছরের বাকি সময় এটি নদীটি থেকে প্রায় আট মাইল দূরে অবস্থান করে। টিম্বাকটু ছেড়ে আসার তুলনায় সেখানে পৌঁছানোটা সহজ হতে পারে। যে কেউ এখানে উপলব্ধ পরিবহন মাধ্যমের তিনটি বিকল্পের মধ্যে যে কোনওটি ব্যবহার করতে পারেন; যেমন বিমান, ভূমি ও জলপথ। টিম্বাকটু ছেড়ে আসা একটি উদ্বেগের বিষয়, কারণ এখানকার পরিবহন মাধ্যমের নির্দিষ্ট সময়সূচী। মালিতে তার নিজস্ব বিমানবন্দর রয়েছে।

  • টিম্বাকটুর স্থানাঙ্ক : 16.7758° N (ডিগ্রী উত্তর), 3.0094° W (ডিগ্রী পশ্চিম)।
  • বামাকো থেকে দূরত্ব : 1,013 কিলোমিটার (ভায়া আর.এন.জি : এই রুটটিতে ফেরি অন্তর্ভূ্ক্ত রয়েছে)।
  • কায়রো থেকে দূরত্ব : 6,063 কিলোমিটার (ভায়া এন.জি)।

টিম্বাকটু পরিদর্শনের সেরা সময়

যেহেতু টিম্বাকটু একটি মরুভূমি শহর, তাই সারাবছর ধরে এখানকার তাপমাত্রা উচ্চ থাকে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা কিছুটা নিম্ন থাকায়, এইসময়ই হল টিম্বাকটু পরিদর্শনের সেরা সময়।

সময়সীমা

টিম্বাকটুর ক্ষেত্রে খোলা থাকার বা দর্শনের জন্য এখানে কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। স্থানটি যখন পরিদর্শনের জন্য নিরাপদ থাকে, তখন যে কোনও সময় আপনি টিম্বাকটু সফরের পরিকল্পনা করতে পারেন।

টিম্বাকটুর টিকিট

টিম্বাকটুতে ঘোরাফেরা বা ভ্রমণের জন্য কোনও টিকিট প্রয়োজন হয় না। ভ্রমণার্থীদের টিম্বাকটু-তে থাকার সময় তাদের পরিবহন, বাসস্থানোপযোগী ব্যবস্থা ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়।

টিম্বাকটু সম্পর্কিত আরোও তথ্য

  • কে টিম্বাকটু জয় করেছিলেন?

সোঙ্ঘাই শাসক সোন্নি আলি, 1468 খ্রীষ্টাব্দে শহরটিকে দখলে আনেন। পরবর্তীকালে, 1591 খ্রীষ্টাব্দে মরক্কো শহরটিকে জয় করে নেয়। 1894 খ্রীষ্টাব্দে ফরাসিরা শহরটিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনে।

  • টিম্বাকটু কিভাবে তার পাণ্ডুলিপি রক্ষা করেছিল?

মালি সরকারের এক উদ্যোগে, নথিপত্র ও গবেষণার জন্য আহমেদ বাবা সেন্টার 30,000-এরও বেশি পান্ডুলিপি সংরক্ষণ করেছিল। এই কেন্দ্রটিতে পান্ডুলিপিগুলিকে ডিজিটাইজড বা ডিজিটায়িত করে রাখা হয়েছে।

* সর্বশেষ সংযোজন : December 17, 2015

Published On: Thursday, December 17th, 2015