বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যগুলির মধ্যে অন্যতম তাজমহল, সহিষ্ণু ভালোবাসার এক প্রতীক - সম্রাট শাহজাহান, তাঁর মৃত স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতিরক্ষার্থে এটির নির্মাণ করেছিলেন। সাদা মার্বেলের তৈরি এটি হল একটি মৌসোলিয়াম বা দরগা, যার মধ্যে সম্রাট তাঁর সম্রাজ্ঞীকে সমাধিস্থ করেন এবং তাঁর নিজের মৃত্যুর পর সম্রাট শাহজাহানকে তাঁর স্ত্রীর পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
শাহজাহান রাজত্বের সরকারী ইতিহাস, আবদূল হামিদ লাহোরি দ্বারা লিখিত তাঁর বাদশাহনামা নামক পুস্তকে তাজমহলকে রৌজা-ঈ মূনাওয়ারা হিসাবে বর্ণিত করেছেন, যার অর্থ হল বিখ্যাত সমাধিস্থল অথবা উদ্দীপ্ত।
ফরাসি প্রভাব ও রুচিময় নকশার ছোঁয়ার সঙ্গে মুঘল সাম্রাজ্য শৈলীর নকশা সমগ্র ভবনটিতে রয়েছে যা মৌসোলিয়াম বা সমাধিক্ষেত্রটিকে বেষ্টন করে আছে। প্রধান ভবনটি 1648 সালে নির্মিত হয়েছিল। তবে, পার্শ্ববর্তী স্থাপত্য গঠনগুলি সম্পূর্ণ হতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। ভবনটির সঙ্গে বাগান, ঝরনা ও একটি প্রতিফলিত জলাশয় রয়েছে, যেটিতে তাজ মহলের প্রতিচ্ছায়া প্রতিবিম্বিত হয়। এই শ্বেত বর্ণের সমাধিস্থলটি একটি বর্গাকার বেদীর উপর সংশ্লিষ্ট আছে, এটি একটি বড় গম্বুজ এবং শোভিত চূড়া দ্বারা ভূষিত একটি খিলান আকৃতির দ্বারের সঙ্গে প্রতিসম ভবনটি গঠিত। প্রকৃত শোভিত চূড়াটি সোনার নির্মিত ছিল, তবে 19 শতকের গোড়ার দিকে এটিকে ব্রোঞ্জের মডেলের দ্বারা প্রতিলিপি করা হয়েছিল। সমাধির চূড়াটি, ফরাসি ও ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রণে একটি পদ্মের নকশার সঙ্গে সুশোভিত। শিল্পরূপ হস্তশিল্পের সাথে সুনির্বাচিত রত্নখচিত কারুকার্য ও বিশদ কারিগরি সকলকে সম্পূর্ণরূপে মুগ্ধ করে তোলে। অভ্যন্তরীণ রত্নখচিত কারুকার্যের জন্য সম্রাট শাহজাহান মূল্যবান ও অর্ধ-মূল্যবান পাথরের ব্যবহারকেই পছন্দ করেছিলেন।
চারটি মিনারের, প্রতিটিই 40 মিটারের চেয়েও বেশি লম্বা, যা মসজিদটির ঐতিহ্যপূর্ণ উপাদানকে পুর্ন আহ্বান জানায়। যদি কোনও মিনার পড়ে গিয়ে তাজমহলের ক্ষতি হয়, তাই সেই ক্ষতি এড়ানোর জন্য মিনার বা স্তম্ভগুলিকে বেদীর বেশ কিছুটা বাইরের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। সমগ্র ভবনটির দেওয়ালে খোদিত কোরাণের গ্রন্থাংশ দেখতে পাওয়া যেতে পারে। এই গ্রন্থাংশ বিচারের দিন বা দ্য ডে অফ জাজমেন্টকে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করে।
শতকের পর শতক ধরে, ভালোবাসার এই স্মৃতিস্তম্ভটি অবহেলা বা অবনতির সম্মুখীন হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, এই বিস্ময়টির পুর্নপ্রতিষ্ঠা সংঘঠিত হয়। ইউনেস্কো (ইউ.এন.ই.এস.সি.ও.) দ্বারা এই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানটি বর্তমানে অত্যধিক দূষণের কারণে বিপদের মধ্যে রয়েছে। সরকার কর্তৃক গৃহীত পুন:প্রতিষ্ঠার কাজ খুবই ধীর গতিতে চলছে।
তাজমহলের একটি সফরের পর, ভ্রমণার্থীরা ক্ষুধা অনুভব করতে পারেন। তাজমহলের কাছাকাছি অনেক খাদ্য সংস্থান আছে। বেশ কয়েকটি খাদ্য সংযোগস্থলের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে দ্য সিল্ক রুট রেস্তোঁরা, জোরবা দ্য বুদ্ধ, ওলিভ গার্ডেন ও ক্যাপরি রেস্তোঁরা।
আপনি যদি আগ্রায় বাসস্থানোপযোগী জায়গার জন্য সচেষ্ট হন, তাহলে তাজমহলের নিকটবর্তী থাকার জায়গাগুলিতে গিয়ে দেখতে পারেন। আগ্রা পরিদর্শনে গেলে যে সমস্ত নিকটবর্তী আকর্ষণীয় স্থানগুলি আপনার দর্শন করা অতি আবশ্যক; সেগুলি হল আগ্রা ফোর্ট, ফতেহপুর সিকরি, সিকন্দ্রা – আকবরের সমাধিস্থল, যমুনা নদী ও মথুরা শহর।
তাজমহল, ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের আগ্রা শহরে অবস্থিত। তাজমহল আগ্রা ফোর্টের সম্মুখে, যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। আগ্রার অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দটি, দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। আগ্রায় পৌঁছানোর জন্য যে কোনও বিমান পেয়ে যাবেন বা সেখানে পৌঁছানোর জন্য কোনও ক্যাব ভাড়াও করতে পারেন। এক উন্নত রেলপথ সংযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে আগ্রা শহরটি দেশের বাকি অংশের সাথে সু-সংযুক্ত রয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে ওয়েবসাইটে টিকিটের উপলব্ধতা সম্পর্কে আপনার যাচাই করে নেওয়াটা প্রয়োজন।
ঠিকানা : আগ্রা, উত্তর প্রদেশ, ভারত।
পিন নং – 282001.
যেহেতু শুক্রবার তাজমহল বন্ধ থাকে, তাই শুক্রবার ব্যতীত সমস্ত দিনগুলিতে তাজমহল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে।
দিল্লি থেকে ট্রেনের মাধ্যমে বিপুল জনতার আগমনের পূর্বে, অনেকে ভালোভাবে ছবি তোলার জন্য সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে তাজমহল পরিদর্শনের সুপারিশ দেন। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নরম আলোয় তাজমহল আরোও সুসজ্জিত হয়ে ওঠে, মৃদূ আলো এবং স্মৃতিস্তম্ভের সম্মুখের সুদৃশ্য রং এবং পুলের জলে তার প্রতিচ্ছায়া এক আলাদা রূপ নিক্ষেপণ করে। পূর্ণিমার সমসাময়িক কালে, মাঝে মাঝে রাতের বেলাতেও এটি উন্মুক্ত থাকে। যদিও রাত্রিতে দর্শন খুবই সীমিত এবং দর্শকদের লাল বেলেপাথর প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যেহেতু অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাসগুলি খুবই শীতলতম হয়, তাই সাধারণত এইসময়ই হল তাজমহল পরিদর্শনের সেরা সময়।
তাজমহলে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন মূল্যের হার প্রযোজ্য আছে। বিদেশী পর্যটকদের জন্য, টিকিটের মূল্য হল 750/- টাকা, সার্ক (সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর রিজিওন্যাল কোঅপার্যাশন্ বা এস.এ.এ.আর.সি) এবং বিমস্টেক (ব্যে অফ বেঙ্গল ইনিসিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টার্যাল টেকনিক্যাল আ্যন্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বি.আই.এম.এস.টি.ই.সি.) দেশের নাগরিকদের জন্য টিকিটের মূল্য হল 510/- টাকা। অন্যদিকে ভারতীয়দের জন্য টিকিটের মূল্য 20/- টাকা ধার্য আছে, বিদেশী ও অন্তর্দেশীয় উভয় ক্ষেত্রেই 15 বছরের নীচে শিশুদের প্রবেশের জন্য কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না।
টিকিটের সংস্থান :
* সর্বশেষ সংযোজন : August 27, 2015