ইন্ডিয়া গেট, দিল্লী

ইন্ডিয়া গেট - নতুন দিল্লীর গর্ব

রাজপথের চৌমাথায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি মহীয়ান খিলানপথ – ইন্ডিয়া গেট হল 70000 ভারতীয় সৈন্যদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত একটি যুদ্ধ স্মারক যারা প্রথম বিশ্বযু্দ্ধে সহযোগী সৈন্যবাহিনীর পক্ষ থেকে যুদ্ধে, তাঁদের জীবন বলিদান দেন। ইন্ডিয়া গেট-এর পূর্বকালীন নাম ছিল অল ইন্ডিয়া ওয়্যার মেমোরিয়াল বা সর্ব ভারতীয় যুদ্ধ স্মারক।

স্থাপত্য

ইন্ডিয়া গেট-টি, বিখ্যাত ইংরেজ স্থপতি স্যার এডউ্যইন লিউটিয়েন্স-এর দ্বারা পরিকল্পিত ছিল। ইনি নতুন দিল্লীর একটি বড় অংশের পরিকল্পনা করার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। মহামান্য কনটে্র ডিউক এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপণ করেন। দশ বছর পর, ভারতের তৎকালীন ভাইসরয়, লর্ড আরউইন, দেশকে এই ইন্ডিয়া গেট উৎসর্গ করেন। লিউটিয়েন্স, সনাতন ভারতীয় উপাদানের সঙ্গে শাস্ত্রীয় স্থাপত্যের মিশ্রনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। লিউটিয়েন্স-এর তদারকিতে আধুনিক খিলানের এক অসাধারণ উদাহরণ হল, দিল্লীর অষ্টম শহর – নতুন দিল্লীর মূল প্রতীক ইন্ডিয়া গেট। এটি ফ্রান্সের আর্ক ডি ট্রাইয়াম্ফ-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যদিও মূলত এটি যুদ্ধ স্মারক তথাপি ইন্ডিয়া গেটের নির্মাণে মুঘল শৈলীতে নির্মিত প্রবেশদ্বারগুলির ভঙ্গিমা অনুকরণ করা হয়েছিল।

ইন্ডিয়া গেট, লাল ভরতপুর পাথরের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইমারতিও লাল বালিপাথর ও গ্রানাইট দ্বারা গঠিত। দুটি বর্গাকার আকৃতির স্কন্ধের উপর একটি উল্টানো অভ্যন্তরীণ গম্বুজ আবির্ভূত রয়েছে। কার্ণিশের উপর সাম্রাজ্যিক নিদর্শন খোদিত রয়েছে। খিলানটির উভয় পাশেই “ইন্ডিয়া” বা “ভারত” শব্দটি খোদাই করা আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুর এবং শেষের তারিখগুলি শব্দটির উভয় পাশেই প্রতীয়মান রয়েছে। কলাম বা খাম্বাগুলিতে, আফগান যুদ্ধে, উত্তর-পশ্চিমী সীমান্তে মারা যাওয়া 13516 জন ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সৈন্যদের নাম বর্ণিত রয়েছে।

ইন্ডিয়া গেটের উচ্চতা হল 42 মিটার এবং ভিত থেকে ছাদ পর্যন্ত একটি সিঁড়ি রয়েছে।

অমর জওয়ান জ্যোতি

অমর জওয়ান জ্যোতি ‘একটি সৈনিকের অমর শিখা’ থেকে অনুবাদিত হয়েছে। এটি একটি কালো মার্বেলের স্মৃতিসৌধ, যার উপর ‘অমর জওয়ান’ শব্দগুলি হিন্দি ভাষায় লেখা রয়েছে। এটির উপরে একটি উল্টানো রাইফেল দাঁড় করানো আছে এবং এটি একটি সৈনিকের শিরস্ত্রাণ দ্বারা অধিষ্টিত করা আছে। তার চারটি কোণে চারটি মশাল ক্রমাগত জ্বলে চলেছে। এই স্মারকটি 1971 সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, যুদ্ধে আত্মবলিদানকারী ভারতীয় সৈন্যদের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল।

অমর জওয়ান জ্যোতি, দিল্লির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী-র দ্বারা 1972 সালের 26-শে জানুয়ারি তারিখে উদ্বোধন করা হয়েছিল। তারপর থেকে এটি সামরিক সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সৈন্যদের দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে। 1971 সালের যুদ্ধে ভারতীয় বিজয় বার্ষিকীর দিন, 16-ই ডিসেম্বর, ভারতের গণতান্ত্রিক দিবস 26-শে জানুয়ারীর দিন – ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই আধারটিতে তাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করেন।

খালি শামিয়ানা

ইন্ডিয়া গেটের প্রায় 150 মিটার পূর্বদিকে একটি খালি শামিয়ানা দেখা যেতে পারে। একটি মুকুটের সঙ্গে সমন্বিত, একটি গ্লোবাস ক্রুশিগার এবং একটি রাজদণ্ড সহ, তার রাজ্যাভিষেক পোশাক পরিহিত রাজা পঞ্চম জর্জের একটি পঞ্চাশ ফুট লম্বা মূর্তি, এই শামিয়ানার নীচে স্থাপণ করা হয়েছিল। এই শামিয়ানাটিও 1932 সালে, লিউটিয়েন্স-এর দ্বারা পরিকল্পিত ছিল।তবে, ভারত স্বাধীনতা লাভের পর, মূর্তিটি, সমস্ত অন্যান্য মূর্তির সাথে সংযুক্তরণের জন্য করোনেশন্ পার্কে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের ধ্বংসাবশেষ রাখা ছিল। অনেকে আবার এই খালি শামিয়ানাটিকে ভারতের জয়যুক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের ইঙ্গিতপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন, যা ব্রিটিশদের নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে। অনেকে, আবার জোর করেছিলেন যে, এক ভারতীয় নেতার মূর্তি, বিশেষত মহাত্মা গান্ধীকে, মর্যাদার এই অবস্থানে অধিষ্ঠিত করা হোক।

কৌশলগতভাবে, ইন্ডিয়া গেট, রাজপথের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। দ্বারটির একটি নিরঙ্কুশ দৃশ্য রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও অনুধাবন করা সম্ভব।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শামিয়ানার আশেপাশে একটি ন্যাশনাল ওয়্যার মেমোরিয়াল (জাতীয় যুদ্ধ স্মারক) এবং প্রিন্সেস পার্কের কাছাকাছি একটি ন্যাশনাল ওয়্যার মিউজিয়াম (জাতীয় যুদ্ধ যাদুঘর), নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সামাজিক জীবনের তাৎপর্য

ইন্ডিয়া গেটের কাছাকাছি ক্ষেত্রগুলিতে অনেক ব্যাক্তিকে পিকনিক করতে দেখা যায়, বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে অনেক পরিবারকে দেখা যায়। দিল্লীর ন্যায়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার শহরে সূর্যকিরণোজ্জ্বল নিজস্ব প্রাঙ্গনের এক অসাধ্য স্বপ্ন এই স্হান সফল করে তুলেছে। সেইরকমই একটি জায়গা হল ইন্ডিয়া গেটের কাছে অবস্থিত উদ্যান যেখানে এক সহজ উপায়ে সকালের সূর্যকে সেবনের মাধ্যমে কিছু সময় কাটাতে পারেন। এটি শীতকালে বিশেষত সত্য। ইন্ডিয়া গেট গ্রীষ্মকালে একটি জনপ্রিয় সান্ধ্য গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন হকার বা ফেরিওয়ালা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের তাদের বেসাতি পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে এবং বিক্রেতারা আইসক্রিম, ঠোঙায় করে ভূট্টা ও গরম চা বিক্রি করে। সন্ধ্যাবেলা ইন্ডিয়া গেট - একটি উৎসবের মেজাজ নিয়ে আসে।

প্রজাতন্ত্র দিবসে প্যারেড বা কুচকাওয়াজ

ইন্ডিয়া গেট প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনে প্যারেড বা কুচকাওয়াজ-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা প্রতি বছর 26-শে জানুয়ারী রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিয়া গেট-এ অমর জওয়ান জ্যোতি-র শহীদদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা-সম্মান জ্ঞাপনের পরই, এই প্যারেড উদ্বোধন করা হয়। সামরিক ও অসামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব এই বর্ণময় প্যারেডের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। তারপর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু হয় এবং ইন্ডিয়া গেট বরাবর প্রেরিত হয়।

ইন্ডিয়া গেট সম্পর্কে তথ্যাবলী

  • ইন্ডিয়া গেট হল ভারতের সবচেয়ে এক বৃহত্তম যুদ্ধ স্মৃতি।
  • এই স্মৃতিসৌধটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় 10 বছর সময় লেগেছিল – 1921 থেকে 1931.
  • এখানকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কই ইন্ডিয়া গেট থেকে সম্প্রসারিত হয়েছে।

ইন্ডিয়া গেট কোথায় অবস্থিত?

ঠিকানা : রাজপথ, ইন্ডিয়া গেট, নতুন দিল্লী – 110001.

বিমান মাধ্যমে পৌঁছানোর উপায় :
ইন্ডিয়া গেট-এর নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। গাড়ির মাধ্যমে ভায়া সর্দার প্যাটেল মার্গ হয়ে 33 মিনিট সময় লাগে।

রেল মাধ্যমে পৌঁছানোর উপায় :
নতুন দিল্লী রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি গাড়ির মাধ্যমে ভায়া কনট্ সার্কাস হয়ে ইন্ডিয়া গেট-এ পৌঁছাতে 12 মিনিট সময় লাগে।

ইন্ডিয়া গেট পরিদর্শনের সেরা সময়

ইন্ডিয়া গেট সারাবছর পরিদর্শন করা যেতে পারে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গ্রীষ্মকালে, ইন্ডিয়া গেট এবং তার কাছাকাছি উদ্যানগুলি সন্ধ্যায় পদচারণার জন্য একটি প্রিয় গন্তব্যস্থল। শীতকালীন ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দিনেরবেলায় রোদ পোহানোর জন্য ভাল। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরের সহানুভূতিশীল মাসগুলিতে, তাপমাত্রা নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায়, এইসময় আপনি দিনে বা রাতে যে কোনো সময় ইন্ডিয়া গেট পরিদর্শন করতে পারেন।

ইন্ডিয়া গেট টিকিট

ইন্ডিয়া গেট পরিদর্শন একেবারে বিনামূল্যে। তবে অবশ্যই, আপনি যদি আপনার নিজস্ব যানবানের মাধ্যমে এখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে পার্কিং-এর জায়গার জন্য ধার্যমূল্য প্রদান করার প্রয়োজন আছে।

ইন্ডিয়া গেট দর্শনের সময়

ইন্ডিয়া গেট সারা দিন ব্যাপী তার দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

ইন্ডিয়া গেট-এর উপর আরোও তথ্য

  • ইন্ডিয়া গেট-এর স্থানাঙ্ক্ কি?
  • ইন্ডিয়া গেট-এর স্থানাঙ্ক্য হল 28. 612 ডিগ্রী উত্তর, 77.229 ডিগ্রী পূর্ব।

  • ইন্ডিয়া গেট-এর নিকটবর্তী পরিদর্শনমূলক স্থানগুলি কি কি?
  • ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট, ইন্ডিয়া গেট, চিল্ড্রেন্স পার্ক, পানডারা রোড মার্কেট, সাতপুলা ব্রিজ, আ্যলিয়েন্স ফ্রাঙ্কেইস ডি দিল্লী ইত্যাদি।

* সর্বশেষ সংযোজন : July 15, 2015

Published On: Wednesday, July 15th, 2015