হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত, ম্যাকলিয়ড গঞ্জ হল ধরমশালার এক শহরতলী এবং মাননীয় দলাই লামার সরকারি বাসভবন। যে কেউ এই অঞ্চলে বেশ কিছু তিব্বতীয় অধিবাসীদের দেখতে পাবেন এবং এখানে আসলে তিব্বতীয় সংস্কৃতির প্রাধান্যই চরিতার্থ হয়েছে। ম্যাকলিয়ড গঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহ, এই সমস্ত কিছু এটিকে উত্তর ভারতের এক জনপ্রিয় প্রবেশদ্বার হিসাবে গড়ে তুলেছে।
সূগলাগখাঙ্গ ভবন : ভবনটি খুব সম্ভবত এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবন কারণ এটিই সেই মন্দির যেখানে দলাই লামা প্রার্থনার জন্য আসতেন। এটি বৃহত্তম তিব্বতী মন্দির যেটি তিব্বতের বাইরে অবস্থিত। মন্দিরটিতে শাক্যমুনি বু্দ্ধের সুন্দর মূর্তি ও ধ্যান সভাগৃহ রয়েছে। ভবনের অভ্যন্তরটি নামগয়াল মঠ সহ অন্যান্য কক্ষ ও মঠের সমন্বয়ে গঠিত। বৃহত্তমটি চেনরেজিগ ও গুরু রিনপোচের ছোট মূ্তি সহ প্রভু বু্দ্ধের একটি মহীয়ান মূর্তির সমন্বয়ে গঠিত। আপনি তিব্বতীয় প্রার্থনা চক্রকে যত পারেন দ্রত ঘুরিয়ে আপনার ভাগ্য জানার ইচ্ছাও পূর্ণ করতে পারেন। ধূপকাঠির সুবাস, প্রার্থনার প্রশান্ত শব্দ ও সন্ন্যাসীদের বিভিন্ন ধ্যানমগ্ন চিত্র নিশ্চিতরূপে আপনার আত্মাকে কিছুটা শান্তি দিতে পারে। ভবনটি দলাই লামার প্রশাসনিক দপ্তর ও আবাসস্হল রূপে পরিবেশিত হয়।
তিব্বত মিউজিয়াম : মিউজিয়ামটি সূগলাগখাঙ্গ ভবনের বেশ কাছেই অবস্থিত এবং এটি দর্শকদের তিব্বতীয়দের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে আরোও তথ্য জানার জন্য একটি সুযোগ দেয়। এছাড়াও এটি তিব্বতের চীন অধিগ্রহণের গল্প এবং কিভাবে তারা তাদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়েছিল সে তথ্যও সকলের সামনে তুলে ধরে। প্রতিদিন বিকেল 3-টেয় এর প্রামান্যচিত্র পর্দায় প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও বেশ কিছু সংখ্যক ক্রিয়াকলাপ ও কার্যক্রম, যেমন আলোচনা এবং প্রদর্শনীও এই জাদুঘরে পরিচালিত হয়।
নোরবুলিঙ্গকা প্রতিষ্ঠান : প্রতিষ্ঠানটি ধর্মশালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং ঐতিহ্যগত তিব্বতী চারু ও কারুশিল্পের অবিরত টিকে থাকাকে নিশ্চিত করতেই দলাই লামার দ্বারা এটি তৈরি করা হয়েছিল। এই ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল তিব্বতীয় মুল্যবোধ এবং তাদের শিল্প ও সাহিত্যের অভিব্যক্তি সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। প্রতিষ্ঠানটি হল “হ্যাপিনেস টেম্পল (সুখীময় মন্দির)”- লোসেল ডোল মিউজিয়াম, দেদেন সূগলাগখাঙ্গ এবং বেশ কিছু সংখ্যক জাপানি-অনুপ্রাণিত নোরবুলিঙ্গকা বাগান এবং ক্যাফের আবাসস্থল। পরিভ্রমণকারীরা বিনামূল্যে বিশিষ্ট অতিথিশালাগুলিতে; যেমন নোরলিঙ্গ অতিথিশালা ও কোনোর হাউসে তাদের সময় কাটাতে পারেন এবং তারা এই এলাকার একটি পরিচালিত সফরও পেতে পারেন।
নির্জনস্থানে সেন্ট জন-এর গির্জা : অ্যাংলিকান চার্চটি নব্য-গথিক শৈলীতে 1852 সালে নির্মিত হয়েছিল। গির্জাটি তার স্থাপত্য ও বেলজিয়ান নকশায়িত কাঁচের জানালার দরুণ পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। গির্জাটি দেওদারু বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত। গির্জাটির পিছনে একটি ছোট কবরস্থান রয়েছে যেটি লর্ড এলগিনের কবর; লর্ড এলগিন, 1862 সালে ভারতের গভর্নর-জেনারেল ও ভাইসরয় ছিলেন। ঐগুলির পাশাপাশি, ভবনটিতে 1905 সালে ভূমিকম্পের শিকার হওয়া অনেক ব্যাক্তির কবরও রয়েছে; এই ভূমিকম্প কাংড়া উপত্যকাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
তিব্বতী চিল্ড্রেন্স’স ভিলেজ : সূগলাগখাঙ্গ ভবন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, তিব্বতি চিল্ড্রেন্স’স ভিলেজ বা এককথায় টি.সি.ভি., উদ্বাস্তু এবং সেইসাথে অনাথ শিশুদের শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল। শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই অঞ্চলে বেশ কিছু ধর্মশালাও রয়েছে; দর্শকদের এই স্থান পরিদর্শনের জন্যও উৎসাহিত করা হয়, তারা যদি চান এর মান পর্যবেক্ষণও করতে পারেন এবং ইচ্ছা থাকলে কিছু অনুদানও দিতে পারেন।
ভাগসু জলপ্রপাত : জলপ্রপাতটি ম্যাকলিয়ড গঞ্জের নিকটেই অবস্থিত এবং দর্শকদের পিকনিকের জন্য একটি চমৎকার জায়গা প্রদান করে। অধিকাংশ ভ্রমণকারীরাই ভ্রমণযাত্রার আনন্দময় দৃষ্টিময়তা উপভোগ করার জন্য এই জলপ্রপাতে হেঁটে যাওয়াটাই পছন্দ করেন। পাশাপাশি এটি পদযাত্রী বা ট্রেকারদের জন্যও একটি দারুণ জায়গা। এগুলি ছাড়াও, জলপ্রপাতের ঠিক আগে ভাগসুনাথ মন্দির, এটিও বেশ জনপ্রিয়। সেতু সহ এটি একটি হিন্দু মন্দির, এটিকে খুবই পবিত্র বলে মনে করা হয়।
ত্রিয়ুন্ড : ম্যাকলিয়ড গঞ্জে আগত দর্শকদের মধ্যে, এই 9,000 ফুট উঁচু শৈলশিরায় ট্রেক বা পদভ্রমণ খুবই জনপ্রিয়। শীর্ষের উপর থেকে এক আশ্চর্য্যময় দৃশ্যকল্পের দরুণ এর শীর্ষে ট্রেকিং করা খুবই দারুণ ব্যাপার। পর্যটকদের অনেকেই, যারা এই নয় কিলোমিটার দীর্ঘ ভ্রমণে উদ্যোগী, তারা শীর্ষচূড়ায় একটি তাঁবু ভাড়া করে সেখানে রাত্রি যাপনের মনস্থিরও করেন।
দ্য পিঙ্ক হাউস এবং দ্য মিস্টি উড্ হোটেল হল বাজেট থেকে মাঝারি মানের আবাসনের জন্য অত্যন্ত ভালো জায়গা, অন্যদিকে যে সমস্ত ভ্রমণার্থীরা খরচের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেন না তাদের জন্য হোটেল শিবানী ইন্টারন্যাশনাল এবং হোটেল ইন্ডিয়া হাউস হল দারুণ বিকল্প।
ম্যাকলিয়ড গঞ্জ, ভারতের হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলায় অবস্থিত। এটি ধরমশালা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
পৌঁছানোর উপায়
বিমান মাধ্যমে
ম্যাকলিয়ড গঞ্জ থেকে প্রায় 18 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গগ্গল বিমানবন্দর হল এখানকার নিকটবর্তী বিমানবন্দর। গাড়ির মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে শহরে পৌঁছাতে প্রায় আধ ঘন্টা সময় লাগে।
রেল মাধ্যমে
কাংড়া রেলওয়ে স্টেশন ম্যাকলয়েড গঞ্জ থেকে প্রায় 25 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি সংকীর্ণ গেজ পথ সমন্বিত এখানকার নিকটস্থ রেলওয়ে স্টেশন। প্রশস্ত গেজ পথ সমন্বিত এখানকার নিকটস্থ রেলওয়ে স্টেশন হল পাঠানকোট জংশন রেলওয়ে স্টেশন যা এখান থেকে প্রায় 89 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাঠানকোট জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে ম্যাকলয়েড গঞ্জ পর্যন্ত যেতে প্রায় দু’ঘন্টারও বেশি সময় লাগে।
সড়ক মাধ্যমে
ম্যাকলিয়ড গঞ্জ এক সু-পরিচর্যিত সড়ক ব্যবস্থা দ্বারা সকল নিকটস্থ শহরগুলির সঙ্গে ভালভাবে সু-সংযুক্ত রয়েছে। এখানে বেশ কিছু বাসও রয়েছে যা দিল্লীর ন্যায় প্রধান প্রধান শহরগুলির মধ্যে চলাচল করে। এখানে অনেকে ট্যাক্সিও ভাড়া করেন যেগুলি তাদেরকে এই সমস্ত প্রধান শহরগুলি থেকে ম্যাকলিয়ড গঞ্জে পৌঁছে দেয়।
জুন ও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের আবহাওয়া, ম্যাকলিয়ড গঞ্জ পরিদর্শনের সেরা সময় হিসাবে বিবেচিত।
* সর্বশেষ সংযোজন : August 14, 2015