রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লার ইতিহাস, মুঘল ইতিহাসের সঙ্গে বিজড়িত, শত শত বছর ধরে এটি তাদের বাসভবন ছিল। 1638 খ্রীষ্টাব্দে, মুঘল সম্রাট শাহজাহান মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত করেন। রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লা নামে একটি নতুন রাজকীয় ভবনের স্থাপনা হয়। নদীতীরের দিকে 18 মিটার ও শহরের দিকে 33 মিটার উচ্চতার সঙ্গে লাল কেল্লা দৈর্ঘ্যে 2.41 কিলোমিটার জুড়ে প্রসারিত রয়েছে। লাল কেল্লার দুটি প্রধান প্রবেশপথ রয়েছে; দিল্লী গেট এবং লাহোরি গেট।লাহোরি গেটের সম্মুখে চাঁদনী চৌক, এই শহরের সবচেয়ে জনবহুল ও বৈচিত্র্যময় বিপণি বা বাজার।
লাল কেল্লা ভবনটি, লাল কেল্লা ও সেলিমগড় দূর্গের (1546 খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত) সমন্বয়ে গঠিত। কেল্লাটিতে দেওয়ান-ঈ-আম বা সর্বসাধারণের সভামন্ডলীর সভাগৃহ অবস্থিত, যেখানে রত্ন খচিত এক মার্বেল-সুশোভিত সিংহাসনে বসে সম্রাট সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতেন। দেওয়ান-ঈ-খাস বা ব্যাক্তিগত দরবারের সভাগৃহ হল এমন একটি স্থান যেখানে ব্যাক্তিগত সভাসদদের প্রবেশাধিকার ছিল। এই সভাগৃহটি মার্বেল দ্বারা নির্মিত এবং তার কেন্দ্রটি ময়ূর সিংহাসন দ্বারা প্রসাধিত ছিল, যেটি চুণী এবং মণি-জহরতের ন্যায় অপরিমেয় মূল্যের রত্ন দ্বারা খচিত ছিল। বর্তমানে, যদিও দেওয়ান-ঈ-খাস হল তার মূল মহিমার শুধুমাত্র একটি ম্লান প্রতিবিম্ব, তবে আমির খুসরুর শ্লোক “পৃথিবীতে যদি কোনও স্বর্গ থেকে থাকে, তবে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই,” – যা তার সাবেক মহিমাকে আমাদের মনে করিয়ে দেয়। রং মহল বা “বর্ণময় রাজপ্রাসাদ”, মার্বেলের একটি একক খন্ডে তৈরি এক অত্যাশ্চর্য্য পদ্ম-আকৃতির ঝরনা ধারণ করে আছে। এখানে সম্রাটের পত্নী ও প্রণয়িনীরা থাকতেন।
লাল কেল্লার মধ্যে নৌবত বা নক্কর-খানা (‘ড্রাম-হাউস) হল এমন একটি স্থান, যেখানে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশিত হত। এটি দেওয়ান-ঈ-আমে অনুপ্রবেশের জন্যও ব্যবহৃত হত। এটি এমন একটি স্থান যেখানে ভ্রমণার্থীরা তাদের হাতি থেকে অবতরণ করতেন। অতঃপর, এটি ‘হাতিপুল’- নামেও পরিচিত। সাম্প্রতিককালে, নক্কর-খানার উপরের তলাটিতে ইন্ডিয়ান ওয়্যার মেমোরিয়াল মিউজিয়াম (ভারতীয় যুদ্ধ-স্মারক যাদুঘর) অবস্থিত।
এই স্মৃতিস্তম্ভটিকে ঘিরে থাকা অন্যান্য আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে হাম্মাম বা রাজকীয় স্নানাগার, শাহী বুর্জ - যা শাহজাহানের ব্যক্তিগত কর্ম-অঞ্চল হিসাবে ব্যবহৃত হত এবং রয়েছে মোতি মসজিদ বা পার্ল মসজিদ। এমনকি আজকের দিনেও, রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লা মুঘল সাম্রাজ্যের মহিমার এক আলংকারিক স্মৃতিচিহ্ন।
লাল কেল্লার বিপরীতদিকে অবস্থিত, জামা মসজিদের নিকটে প্রচুর পার্কিং হিসাবে গাড়ী পার্কিং করা একটি বড় ঝামেলা। এই পার্কিং থেকে দূর্গটির প্রবেশদ্বারে পৌঁছাতে আপনাকে বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে হবে। তাছাড়াও, সংযু্ক্ত রাস্তায় ট্রাফিকের খেঁচানি পর্যটকদের রাস্তা পারপারকে কঠিন করে তুলেছে। তাই একটি ট্যাক্সি নিয়ে ভ্রমণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ছোট্ট চৌকে অবস্থিত মীনা বাজারে অনেক দোকান রয়েছে যেখানে বিভিন্ন হস্তনির্মিত দ্রব্য বিক্রয় হয়; যেমন গহনা-অলংকার, অঙ্কন, কূর্তি ইত্যাদি।
ভারতের পর্যটন উন্নয়ন নিগম লিমিটেড দ্বারা ঐতিহাসিক যুগের উদ্ভাবনীকে পুনরায় সজীব করে তোলার জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল সন্ধ্যার সময় একটি আলোক ও ধ্বনি প্রদর্শনীর সঞ্চালন করা হয়। হিন্দি ভাষায় এই প্রদর্শনীর সময়সীমা হল সন্ধ্যা 7:00-টা. থেকে রাত 8:00-টা.পর্যন্ত, অন্যদিকে ইংরাজীতে এই প্রদর্শনী রাত 8:30-টা. থেকে রাত 9:30-টা. পর্যন্ত সঞ্চালিত হয়। সাপ্তাহিক দিনগুলিতে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য হল – প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভারতীয় মূল্যে মাথাপিছু 60/- টাকা এবং (3 থেকে 12 বছর বয়সই) শিশুদের জন্য 20/- টাকা। সপ্তাহান্ত ও জাতীয় ছুটির দিনগুলিতে টিকিটের মূল্য - প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভারতীয় মূল্যে মাথাপিছু 80/- টাকা এবং শিশুদের জন্য 30/- টাকা। এই টিকিট অনলাইনের মাধ্যমেও সংরক্ষণ বা বুক করতে পারেন - theashokgroup.com.
রেড ফোর্টের কাছাকাছি বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে গুরুদুয়ারা শীস গঞ্জ সাহিব, জামা মসজিদ, চাঁদনী চৌক মার্কেট, শ্রী দিগম্বর জৈন লাল মন্দির, ফতেহপুরী মসজিদ, বিজয় ঘাট ও শান্তি বন।
লাল কেল্লা, ভারতের দিল্লীতে নেতাজী সুভাষ মার্গে অবস্থিত। মেট্রো পরিবহন ব্যবস্থর মাধ্যমে এখানে সহজেই পৌঁছানো যেতে পারে। নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন হল চাঁদনী চৌক। আপনি যদি রেলের মাধ্যমে দিল্লীতে আসেন, তাহলে লাল কেল্লা থেকে মাত্র 1 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুরনো দিল্লী রেলওয়ে স্টেশন হল এখানকার নিকটস্থ রেলওয়ে স্টেশন। এছাড়াও এটি আন্তঃ রাজ্য বাস টার্মিনাল (ইন্টার স্টেট বাস টার্মিনাল বা আই.এস.বি.টি.)-এর সান্নিধ্যেই অবস্থিত। অর্থাৎ স্থানটি বাস মাধ্যমে সু-সংযুক্ত রয়েছে। এই দূর্গ থেকে প্রায় 26 কিলোমিটার দূরে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি অবস্থিত।
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানকার আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকায়, এই সময়ই হল লাল কেল্লা পরিদর্শনের সেরা সময়।
সোমবার ব্যতীত সপ্তাহের প্রতিদিনই এই কেল্লাটি খোলা থাকে। এটি সকাল 9:30-টা. থেকে বিকেল 4:30-টে. পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।
বিদেশীদের জন্য প্রবেশমূল্য হল ভারতীয় মূল্যে 250/- টাকা এবং ভারতীয়দের জন্য 10/- টাকা।
* সর্বশেষ সংযোজন : August 21, 2015